আত্নহত্যা একটি জঘন্য অপরাধ। আত্নহত্যা মানব জগতের ক্রমধারার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ বিষয়ে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেন ”লুৎফুর রহমান ফরায়েজী।”
প্রশ্নঃ আত্মহত্যা করলে কি চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হয় ?
এর কি কি শাস্তি রয়েছে ?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
আত্মহত্যা করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একে স্পষ্ট ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا [٤:٢٩
আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। {সূরা নিসা-২৯}
রাসূল সাঃ আত্মহত্যা করার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন-
عَنْ أبي هريرة , عَن النبي – صلى الله عليه وسلم – قال : من تردى من جبل , فقتل نفسه , فهو في نار جهنم يتردى فيها خالدا مخلدا فيها أبدا , ومن تحسى سما , فقتل نفسه , فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا , ومن قتل نفسه بحديدة , ثم انقطع علي شيء , يعني خالدا , كانت حديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৪২, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১৯৬৪}
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আত্মহত্যাকারী লোকটি যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছে, উক্ত পদ্ধতিতে সে জাহান্নামে চিরকাল শাস্তি পেতে থাকবে।
এ হাদীস দ্বারা যদিও আত্মহত্যাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আসলে এমন নয়। বরং আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়, আর ঈমানের সাথেই যদি মৃত্যুবরণ করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না। চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে কেবল কাফের-মুশরিকরা। কোন মুসলমান চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না।
তবে দীর্ঘস্থায়ী জাহান্নামী হতেও পারে। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্যও এটাই। আরবের পরিভাষায় خالدا مخلدا শব্দ, যার অনুবাদ করা হয়, “চিরকাল”মূলত এর দ্বারা আরবের লোকেরা কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাকে বুঝিয়ে থাকেন। উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্যও দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। চিরস্থায়ী হওয়া নয়। [দ্রষ্টব্য শরহু সহীহিল বুখারী লিইবনে বাত্তাল, উমদাতুল কারী}
এক কথায় আত্মহত্যা করা কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ তওবা দ্বারা মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির তওবার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তওবা না করলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলেই উক্ত ব্যক্তিকে নিজ রহমাতে মাফ করে দিতে পারেন। কিংবা তাকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি দিতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:١١٦
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। {সূরা নিসা-১১৬}
কিন্তু ঈমানদার ব্যক্তি কিছুতেই চিরস্থায়ী শাস্তি পেতে পারে না। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ
عن أنس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن شعيرة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن برة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن ذرة من خير
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেনঃ যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১২৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৩৮৫ , সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৪৪৩, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১২৬, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-২৯২৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১৫৩, মাশকিলুল আসার লিততাহাবী, হাদীস নং-৪৮৩৮, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১২৪৩}
লেখক: পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।