কার স্কিন কত ভাল এর পেছনে খালি Skin Care প্রোডাক্ট যা যা ঘষছি তা ই ভূমিকা রাখেনা! আমাদের জেনেটিক্স, লাইফস্টাইল, এনভারনমেন্ট, হরমোন সব কিছুর ভূমিকা আছে।
‘যেখানে দেখিবে যা কিনিয়া ফেলিবে তা’ অথবা ‘ও মাখছে, আমি ও মাখি’ – এই দুই নীতিতেই পা দিয়েছেন তো ধরা খাওয়া নিশ্চিত।
কয়দিন আগে Sabu Shop এর ভাইরাল মিস সাবু যখন আইন রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বাজে কসমেটিক প্রোডাক্ট বিক্রির অভিযোগে ধরা খান, উনার ফ্যান ফলোয়ার বেশ সরব হয়ে উঠেছিলেন। প্রতারণার দায়ে কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন।
আমি যেটা বুঝিনা সেটা হল, সাবু তো অপরাধী বুঝলাম, কিন্তু যারা এই ফাঁদে পা দেন তারা কি? বেশি সরল সিধা মানুষ?! কোন প্যাঁচ বুঝেনা! নতুবা চটকদার বিজ্ঞাপনে কিভাবে এতো বিশ্বাস এনে ফেলা সম্ভব?আমার হিসেব মেলে না।
৩ শ্রেণীর মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভিক্টিম হতে দেখা যায়-
১) যাদের গায়ের রং কালো বা শ্যামলা –
ফর্সা যাদের হতেই হবে বলে বিশ্বাস করেন।
২) মেছতা বা মুখে যেকোন দাগ আছে যাদের
৩) ব্রণ আছে যাদের
হাইলি এডুকেটেড মানুষজন কিভাবে বিজ্ঞাপনের ধোঁকায় পড়ে না দেখলে বিশ্বাস করার না!
মজার ব্যাপার, এমন না যে এসব প্রোডাক্ট সস্তা তাই মানুষ কেনে! অধিকাংশই এক্সপেন্সিভ! অথচ মানুষ কিনছে উন্মত্তের মত!
Dermatologically tested product কয়জন বুঝে? অথচ এদিকে একেকজন ৪-৫ টা সেরাম,ক্রিম, ক্লিঞ্জার, টোনার আরো কত কি কিনছেন। একটা কমপ্লিকেশন ঢাকতে এটা লাগাচ্ছি তো সেটার কমপ্লিকেশন ঢাকতে আরেকটা!
ফেসবুক পেইজগুলোতে ঘরোয়া প্যাকের রমারমা অবস্থা। মান নিয়ন্ত্রণ দেখার কেউ নেই। কি কি সব উপাদান তাতে আছে, কি বা তার পরিমাণ, কি ই বা তার এফেক্ট কে খোঁজ নেয়।
স্কিন ড্যামেজ কারো হয় রাতারাতি, কারো বা মাস বা বছর পেরিয়ে। বাজে কসমেটিকস আমাদের স্কিন এ এজিং প্রসেস কে ত্বরান্বিত করে। কিছু কিছু উপাদান এতোই ভয়ংকর যে, ১০-২০ বছর ব্যবহারে স্কিন ক্যান্সার ও করতে পারে।
আমরা স্কিনের উপর অতিরিক্ত অত্যাচার করছি না তো? স্কিন কেয়ার করতে কি কি লাগাব আমরা?আর কত কিছু আমরা কিনব? এর শেষ আসলে কোথায়? – এইটা কিন্তু খুবই ভ্যালিড একটা প্রশ্ন।
পড়ুন: আম খাওয়ার পর যে ৫ খাবার খাওয়া উচিত নয়
যারা কিছু না বুঝেই স্কিন নিয়ে খেলেন, তাদের উদ্দেশ্যে অল্প কয়েকটা কথাঃ
▪️ বুঝে শুনে নিজের স্কিন কেয়ার রুটিন বানান
▪️ শুধুমাত্র ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্ট, বিশেষ করে মেডিক্যালি টেস্টেট প্রোডাক্ট বেছে নিন।
▪️কেনার আগে বার কোড চেক করা, বোতল এর সাথে প্যাকেটের নাম্বার মিলিয়ে দেয়া এরকম যা যা করা যায় সব করে মোট কথা অথেনটিক প্রোডাক্ট নিশ্চিত করুন।
▪️ব্র্যান্ডেড যেকোন একটা আইটেম কিনতে সাধারণত বাজেট হাজার কাছিয়ে যায় (অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যায়)।
আর্থিক অসংগতি থাকলে নানা জাতের কম দামি জিনিস না মেখে বেসিক স্কিন কেয়ার হয় সেটা মাথায় রেখে ভাল মানের ২-৩ টা প্রোডাক্ট কিনুন।
বেসিক মানে কি?
একটা ভাল মানের ফেস ওয়াশ
একটা ময়েশ্চারাইজার
একটা সানব্লক
▪️যেকোন প্রোডাক্ট মুখে মাখার আগে Patch Test করুন ইউটিউবে দেখে নিন। রিয়্যাকশন না হলে মুখে লাগান।
▪️ ব্রণ আক্রান্ত হলে, ব্রণ শুরু হওয়া মাত্র ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করুন।
▪️মেছতা আক্রান্ত হলেও দাগে নিজে কিছু করে জটিল না করে ডাক্তার দেখান।
▪️ যেকোন স্থানের দাগ-গর্ত পুষে রাখবেন।
▪️গায়ের রং বদলাবার চেষ্টা করবেন না, এ জিনিস বদলাবে না।
▪️মুখে শক্তিশালী স্টেরয়েড মাখছেন কীনা খেয়াল করুন সবসময়।
কসমেটিকস এর অপব্যবহার এ কি কি বিপদ হতে পারে Dermatologist ছাড়া এর সত্যিকার অবস্থা উপলব্ধি করা যেকারো জন্যে কঠিন।
আমি যদি আমার আর্কাইভে থাকা রোগীর ছবি দিতে পারতাম সত্যিকারভাবে তবে আমি বোঝাতে পারতাম কি ভয়াবহ অবস্থা চলছে! সেটা তো সম্ভব না রোগীর গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে। আমরা সচেতন না হলে, অবস্থা শোচনীয় হতে বাধ্য।
To me, this is not just a ‘problem’!
This is a hidden epidemic no one is talking about!
এরই মধ্যে ক্ষতি যা হবার হয়ে থাকলে দেরি না করে ডার্মাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হোন। সঠিক চিকিৎসা অনেক সমস্যাই সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
ডা. সুসমা রেজা, এমবিবিএস, এমডি (বিএসএমএমইউ)