Site icon The Daily Moon | Popular Bangla News | National | International | Education | Entertainment | Religion | Employment

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উদারতা

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী থেকে দেখা যায়, তাঁর চাক্ষুষ শত্রুকে তিনি হাসিমুখে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নবুওয়াতের শুরুর জামানায় তিনি যখন তায়েফে কালিমার দাওয়াত দিতে উপস্থিত হলেন, সেখানে তায়েফবাসী কর্তৃক আক্রান্তও হয়েছিলেন। তখন জায়েদ ইবনে হারেছা বলেছিলেন, আপনি তাদের জন্য বদদু’আ করুন; তারা যেন ধ্বংস হয়ে যায়। হজরত জিব্রাইল (আ.) এসে বললেন, আপনি হুকুম দিন তায়েফের দুই পাশের পাহাড় একত্রিত করে তায়েফবাসীকে ধ্বংস করে দিই। কিন্তু রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না আমি বদদু’আর জন্য প্রেরিত হইনি আমি রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।

এজন্য আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আপনাকে কেবল বিশ্বজগতের জন্য অনুগ্রহ স্বরূপ প্রেরণ করেছি’ (সুরা আম্বিয়া-১০৭)। আল্লাহতায়ালা রসুলুল্লাহ (সা.)-কে ক্ষমা নামক মহাগুণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে কুরআনুল কারিমে আদেশ করেছেন, ‘আপনি ক্ষমা করতে থাকুন, আর ভালো কাজের আদেশ দিতে থাকুন’ (সুরা আরাফ-১৯৯)। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক।

মক্কা বিজয়ের পর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষমা ও উদারতার ঘটনা বিস্ময়কর; তিনি তাদের বললেন- ‘হে কুরাইশগণ! তোমাদের সঙ্গে এখন আমার আচরণের ধরনা সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী? তারা বলল, আপনি সম্মানিত ভাই এবং সম্মানিত ভাইয়ের ছেলে। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন যাও তোমরা মুক্ত।’ এই অনুভূতির ঢেউ তরঙ্গায়িত হয়ে তাদের অন্তরের গহিনে ইমানি জাগরণ তুলল। দলে দলে এসে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে হাত রেখে ইসলাম গ্রহণ করেন। আজ ইতিহাসের পাতায় আপন মর্যাদায় স্বমহিমায় সেই ক্ষমার ঘটনা বিরাজমান।

ক্ষমা ও উদারতার কিছু দৃষ্টান্ত :

অমুসলিমদের অধিকার খর্ব করার প্রতি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মনে রেখো, যদি কোনো মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষে অবলম্বন করব (আবু দাউদ)।

এক বেদুইন মসজিদে পেশাব করলে রসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ক্ষমা করলেন; এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জনৈক বেদুইন দাঁড়িয়ে মসজিদে পেশাব করল। লোকেরা তাকে বাধা দিতে গেলে রসুলুল্লাহ তাদের বললেন, তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার পেশাবের ওপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ তোমাদের কোমল ও সুন্দর আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, রূঢ় আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়নি’ (বুখারি)।

একবার তাই গোত্রের লোকেরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, এতে তাদের কিছুলোক বন্দী হয়েছিল। তাদের মধ্যে আরবের প্রসিদ্ধ দাতা হাতেমের এক মেয়ে ছিল। যখন সে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বললেন যে, সে হাতেম তাইয়ের মেয়ে, তখন রসুলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত আদব ও সম্মানসূচক ব্যবহার করলেন এবং তার সুপারিশক্রমে তার গোত্রের শাস্তি ক্ষমা করে দিলেন।

পরিবারের নারীদের সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর ব্যবহার যেমন ছিল।

ক্ষমা ও উদারতার ফজিলত:

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) সহিষ্ণুতার মর্যাদা তুলে ধরে বলেন, হজরত মুসা (আ.) আল্লাহতায়ালাকে জিজ্ঞেস করেন, হে রব! তোমার কাছে কোন বান্দা বেশি মহিমান্বিত? জবাবে আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয় (মিশকাত)।

হজরত রসুলুল্লাহ (সা.)-এর উদারতার বর্ণনা করতে গিয়ে তার খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি ১০ বছর ধরে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করেছি। তিনি আমার কোনো আচরণে বিরক্ত হয়ে কখনো উহ বলেননি এবং কখনো বলেননি যে, অমুক কাজ কেন করলে? অমুক কাজ কেন করলে না? (মুসলিম, কিতাবুল ফাজাইল)।

এমন আরও অসংখ্য হাদিস থেকে জানা যায়, ক্ষমা করা কষ্টসাধ্য হলেও এর ফল সুমিষ্ট, ক্ষমাকারী যেমন আল্লাহর প্রিয়পাত্র তেমনি মানুষেরও প্রিয়পাত্র। মানুষ যখন উক্ত গুণে গুণান্বিত হয় তখন আল্লাহর ফেরেশতাগণ তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে জীবন গঠন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ড. মো. মোরশেদ আলম সালেহী, ইসলামবিষয়ক গবেষক।

Exit mobile version