মুফতি সাদ তাশফিন: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হচ্ছে চলাফেরা। মাস্ক হচ্ছে উঠছে নিত্যসঙ্গি। এ জন্য সতর্কতাবশত মুসল্লিদের মুখে মাস্ক পরে নামাজ পড়তে হয়।
গত বছরখানেক ধরে মানুষ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। এর আগে মানুষকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, আর কাউকে মুখে মাস্ক পরেও নামাজ পড়তে হয়নি। ফলে অনেকের মনে এই প্রশ্নটি উঁকি দিচ্ছে যে, মুখে মাস্ক পরে নামাজ পড়া যাবে কিনা?
মাস্ক পরে নামাজ আদায়
পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে বাধ্য হয়ে মুখে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। এটা একটি শরয়ি ওজর বা অপারগতা।
তাই এই বিপদের মুহূর্তে (রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায়) মুখে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে শরিয়তে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৫২, রাদ্দুল মুহতার : ১/৬৫২)
তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মাস্ক কিংবা অন্য কিছু দিয়ে নাক, মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৫২; রাদ্দুল মুহতার : ১/৬৫২)
অন্য সময়ে মুখ ঢেকে নামাজ
রাসুল (সা.) স্বাভাবিক অবস্থায় মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজরত অবস্থায় মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৬৬)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে—
উল্লিখিত হাদিসগুলোতে নাক, মুখ ঢেকে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হলেও, অসুস্থতা ও অপারগতার বিষয়টা ভিন্ন। ইসলাম কখনোই মানুষের ওপর তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারো ওপর সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
সতর্কতা ও মাস্ক ব্যবহার
করোনাভাইরাস যেহেতু খালি চোখে দেখা যায় না। ফলে নিজেরাও জানি না যে, কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়। এমনকি আমরা নিজেরা আদৌ এই ভাইরাস থেকে মুক্ত আছি কিনা— সেটা সম্পর্কে ধারণা নেই? কিংবা যে মানুষটি আমাদের আশেপাশে রয়েছেন কিংবা যার সংস্পর্শে আমি যাচ্ছি— তিনি এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্ত কিনা? তাই আমাদের সবার উচিত সবসময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে এটাই ইসলামের শিক্ষা। তাই আমরা জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব।
মহান আল্লাহ তাআলা সব ধরনের রোগ-বালাই ও মহামারি-বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।