মোনকের ও নকীর আল্লাহর দুইজন ফেরেশতা। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাকে কবরস্থ করা হলে তার কাছে এই দুইজন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাকে কিছু প্রশ্ন করেন। কবরের পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘আলমে বরজখ’। এর বাইরে ফেরেশতাদ্বয়ের আর কোনো দায়িত্ব আছে কি না তা আল্লাহতাআলাই ভালো জানেন। এ ফেরেশতাদ্বয়ের পরিচয় বলা হয়েছে: ‘হুমা মালাকানে ফায্যানে গালিজানে, ইয়াস আলানে ফিল কাবরি কুল্লা আহাদিন আন রাব্বিহি ওয়া আন নাবিয়্যিহি। অর্থাৎ তারা দুইজন নিষ্ঠুর, পাষাণ ও নির্দয় হৃদয়ের ফেরেশতা, প্রত্যেক (মৃত ব্যক্তি)-কে কবরে তার রব ও তার নবী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।
আলমে বরজখে মোনকের ও নকীর নামের এ দু’জন ফেরেশতা মৃত ব্যক্তিকে কোনো আবোল-তাবোল বা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করেন না। তাদের প্রশ্ন মৃত ব্যক্তির মূল আকীদা, বিশ্বাস তথা আল্লাহ ও তার রাসূল সম্পর্কে। এ পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিভিন্ন হাদীস রয়েছে, যার কয়েকটি নিম্নরূপ:
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন: বান্দাকে যখন (মৃত ব্যক্তিকে) কবরে রাখা হয় এবং তার আপন-স্বজন তাকে ছেড়ে চলে যায়, তখনো সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে থাকে, এ সময় তার কাছে দুইজন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাকে এই মর্মে প্রশ্ন করেন, এই ব্যক্তি (মোহাম্মদ সা.) সম্পর্কে তুমি কি বল? মোমেন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ইনি আল্লাহর বান্দা এবং তার রাসূল।
এরপর তাকে বলা হবে, দেখ, দোজখে নিজের ঠিকানা। আল্লাহ তার বদলে তোমাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। সে দুটি স্থান দেখবে, কিন্তু মোনাফেক ও কাফেরকে যখন প্রশ্ন করা হবে, এ ব্যক্তি (মোহাম্মদ সা.) সম্পর্কে তোমার কি মত? তখন সে বলবে ব্যক্তিগতাভাবে ভাবে তার সম্পর্কে আমি কিছু জানি না, আমি লোকদের কাছে শুনা কথাই বলতাম। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিতে কিছু জান না এবং কোরআন পড়োনি। অতঃপর তাকে লৌহ দুরমুজ দ্বারা পেটানো হবে এবং এতে সে এমনভাবে চিৎকার করতে থাকবে যে, সে চিৎকারের শব্দ মানব ও দানব (জি¦ন) ব্যতীত আশ-পাশের সবাই শুনতে পাবে।’ (বোখারী ও মুসলিম)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘তোমদের মধ্যে কেউ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তাকে সকাল সন্ধ্যা দু’বার প্রাপ্য স্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতি হয় তাহলে জান্নাতিদের স্থান এবং যদি সে জাহান্নামী হয় তাহলে তাকে জাহান্নামীদের স্থান দেখানো হয়। অতঃপর তাকে বলা হয়, এটি তোমার স্থান (অপেক্ষা করো), এমনকি আল্লাহ তোমাকে কেয়ামতের দিন নিয়ে যাবেন।’ (বোখারী মুসলিম)।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন তার কাছে কোবরা-কালো সাপের ন্যায় চোখবিশিষ্ট ফেরেশতাগণের আগমন ঘটে। তাদের মধ্যে একজনের নাম মোনকের এবং দ্বিতীয় জনের নাম নকীর। তারা দুইজনই ঐ মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি এ্ই ব্যক্তি (মোহাম্মদ সা.) সম্পর্কে কি বলো? সে (মৃত ব্যক্তি) জবাবে বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তার রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। এ কথা শুনে ফেরেশতাদ্বয় বলবেন, আমরা জানতাম যে তুমি এ জবাব দেবে।
অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হবে এবং কবরকে আলোকিত করা হবে এবং তাকে বলা হবে শুয়ে থাক। মৃত ব্যক্তি বলবে, আমি স্বীয় পরিবার-পরিজনের নিকট যেতে ইচ্ছুক, যাতে তাদেরকে এ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে পারি। ফেরেশতাগণ আবার বলবেন; শুয়ে থাক, যেভাবে দুলহান শুয়ে থাকে, তাকে কেবল সে ব্যক্তি জাগাতে পারে, যে তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এমনকি আল্লাহ তোমাকে এ স্থান থেকে তুলে নেবেন। (এ অবস্থা মৃত মোমেনের)।
আর মৃত ব্যক্তি যদি মোনাফেক হয় তাহলে, ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাবে বলবে: আমি লোকের মুখে বলাবলি করতে যা শুনেছি তাই বলতাম, কিন্তু আমি তার বাস্তবতা জানতাম না। জবাব শুনে ফেরেশতাগণ বলবেন, আমরা জানতাম তুমি এমনি বলবে। তারপর জমিনকে নির্দেশ দেয়া হবে তার পাজরগুলো এদিক-সেদিক বের হয়ে আসবে এবং সর্বদা তার ওপর আজাব হতে থাকবে, এমনকি আল্লাহতাআলা তাকে সে স্থান হতে নিয়ে যাবেন। (তিরমিজী)।
আবু দাউদ শরীফের বরাতে হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে মোনকের-নকীরের প্রশ্ন সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। যেমন, তার কাছে দুইজন ফেরেশতা আসবেন এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার খোদা কে? সে বলবে, ‘হা-হা লা-আদরী’ অর্থাৎ- আফসোস আফসোস, আমি জানি না। নবী সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবেও কাফের একই জবাব দেবে অর্থাৎ ‘হা-হা লা-আদরী’। একই হাদীসে আরো বলা হয়েছে, তাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করা হবে এবং তার কবর সঙ্কীর্ণ করে দেয়া হবে এবং তার জন্য একজন অন্ধ, বধির ফেরেশতা নিয়োগ করা হবে। লৌহ দুরমুজধারী এ ফেরেশতা তাকে প্রহার করতে থাকবেন। অবশেষে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
আল্লাহ তাআলা সকল মোমেন মুসলমানকে কবরের আজাব হতে রক্ষা করুন এবং মোনকের-নকীরের প্রশ্নের জবাব সহজ করে দিন।