Site icon The Daily Moon | Popular Bangla News | National | International | Education | Entertainment | Religion | Employment

সয়াবিনের রাজধানী লক্ষ্মীপুুর

সয়াবিন (Glycine max) হলো এক প্রকারের শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদ। এটির আদি নিবাস পূর্ব এশিয়াতে। এটি একটি বাৎসরিক উদ্ভিদ। অতিরিক্ত চর্বিবিহীন সয়াবিন দিয়ে তৈরি খাবার প্রাণী দেহের জন্যে প্রয়োজনিয় প্রোটিনের প্রাথমিক উৎস।

দেশে উৎপাদিত সয়াবিনের ৭৫-৮০ শতাংশই উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চলে। সয়াবিন লক্ষ্মীপুর জেলার অন্যতম প্রধান ফসল। মোট দেশজ সয়াবিনের উৎপাদনের সিংহভাগ-ই উৎপন্ন হয় লক্ষ্মীপুরে । লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ন কৃষি জমির অধিকাংশই সয়াবিন চাষে ব্যবহৃত হয়। প্রধানত রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় সয়াবিন চাষ হয় ব্যাপক হারে। সয়াবিন দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটিতে চাষের জন্য উপযোগী। । এই অঞ্চলের মাটি সয়াবিন চাষের বিশেষ উপযোগী।

উৎপাদন ও ফলন:

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন চাষ দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। রবি মৌসুমে মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়ে সয়াবিন বপন করে ৯০ থেকে ১১০ দিন সময় পর সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৮০ ভাগ সয়াবিন এ জেলায় উৎপাদিত হচ্ছে। সর্বপ্রথম একসাথে ১৯৮২ সালে এ জেলার রামগতি উপজেলায় মাত্র ১ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে এমসিসি ও ডর্প নামক দুটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সয়াবিন চাষে কৃষকদেরকে ব্যাপক উদ্বুদ্ধ করে। তখন থেকেই ধীরে ধীরে অন্য রবি ফসলের সাথে সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

উৎপাদন খরচ কম, ভালো দাম ও ফলন পাওয়ায় বর্তমানে জেলার চাষীরা অন্য রবি শস্যের পরিবর্তে দিন দিন সয়াবিন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এভাবে প্রতিবছর ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে বিগত রবি মৌসুমে (২০১৫-১৬) এজেলায় ৫২,৭২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয় এবং প্রায় ১ লক্ষ মেঃ টনের বেশি সয়াবিন উৎপন্ন হয় যার বাজার মূল্য তিনশত কোটি টাকার বেশি।

শরৎকালে এ জেলায় ৫০০ হেঃ জমিতে প্রায় ১০০০ মেঃ টন সয়াবিন উৎপাদত হয়। সয়াবিন একটি পরিবেশ বান্ধব ফসল। সয়াবিনে সারের পরিমান কম লাগে। হেক্টরে সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। ভাল ফসল ও দাম পাওয়া গেলে উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসল আবাদ করে পাওয়া যায় না। তাছাড়া সার, কীটনাশক ও পরিচর্যায় খরচ হয় তুলনামূলক কম। প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয় ১৩০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।

সয়াবিনে পুষ্টি গুনাবলী :

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে খাদ্য হিসেবে সয়াবিনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণ হচ্ছে এতে শতকরা ৪০ ভাগের অধিক আমিষ এবং ২০-২২ ভাগ তেল রয়েছে। এছাড়া সয়াবিন শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন এ, বি ও সি’র উন্নত উৎস হিসেবে কাজ করে। সয়াবিন শুধু কোলেস্টেরলমুক্তই নয়, বরং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। মানুষের সু-স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে সয়াবিনজাত প্রোটিনের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে স্তন ক্যান্সার, অন্ত্রের ক্যান্সার ও প্রন্থির ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে সয়াবিন। সয়াবিন পেশি গঠন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া সয়াবিন হজম বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলস রোগ নিরাময় করে। মেয়েদের মাসিককালীন প্রদাহ, আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অস্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রণ করে।

সম্ভাবনা :

সয়াবিন শিল্পের উন্নয়নের সাথে লক্ষ্মীপুর সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করা সম্ভব। এর ফলে কৃষকেরা সয়াবিন বিক্রির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও যথেষ্ট পরিমাণ অবদান রাখছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন বাজারজাতকারণ, সরবরাহকারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্রামের আরও অনেকে শ্রমিকের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে লক্ষ্মীপুর এর হতে দারিদ্র্যতা দূর হচ্ছে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। সয়াবিন-কে ঘিরে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে পাশাপাশি সম্পূরক শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এতে কৃষক ছাড়াও স্থানীয় বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিদেশিরা আমাদের এই কৃষি-কে মূল্যায়ন করে এবং লালন করছে। বাংলাদেশের সয়াবিন উন্নত গুনগতমান ও মূল্য তুলনামূল হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সয়াবিন এর বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যেও সয়াবিন এই চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বিদেশে সয়াবিনের বাজার প্রসার করে সয়াবিনকে আরও গ্রহণযোগ্য কররে তোলা হবে।

সয়াাবিন চাষে হুমকি:

লক্ষ্মীপুর জেলাটি মেঘনার র্তীরে অবস্থিত। মেঘনার প্রবল ভাঙ্গনের ফলে এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ জায়গা জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। ফলে তার আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় সায়াবিন চাষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

সয়াবিন থেকে তৈরিকৃত খাবারও পুষ্টিকর পণ্য বাজারজাতকরণে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন কোম্পানীর প্যাকেটজাত খাবার । এছাড়া সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে পামওয়েল বাজারে সহজলব্যও মূল্য কম থাকায় উদ্যোক্তরা স্থানীয়ভাবে সয়াবিল তেল উৎপাদনে কম আগ্রহী।

জলবায়ু পরিবর্তন, অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি এমনকি সয়াবিনের ফলন মুহূর্তে বৃষ্টি হচ্ছে যা সয়াবিন ফসলের জন্য প্রধান হুমকি।

সব কিছু বিবেচনায় সয়াবিন ফসল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে লক্ষ্মীপুর। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা এ ক্রমধারা বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

Exit mobile version