জুনায়েদ ইভান: বাড়িওয়ালা ভাড়ার টাকায় চলে। ভাড়াটিয়া যে অফিসে কাজ করে সেই অফিস বন্ধ। অফিসের বস যিনি তিনিও দিশেহারা। মহল্লায় এক মুদি দোকান ছিল, সেও মুখের উপর বলে দিল – আর বাকিতে দেয়া সম্ভব না।
এখন অফিস না চললে বেতন দিবে কীভাবে ? বেতন না পেলে বাড়িভাড়া কীভাবে দিব ? ভাড়া না পেলে বাড়িওয়ালার সংসার চলবে কীভাবে ? দোকানদার বাকিতে দিলে তার সংসার কে চালাবে ? তাকে কী কেউ বাকিতে চালিয়ে নেবে ? বুকের ভেতরে ব্যথা উঠলে কোন একটা ফার্মেসী কী একটা ওষুধ দেবে বিনা পয়সায় ? নিজের হলে নাহয় সহ্য করে নিব, মায়ের যদি ওষুধ করে ? মা’কে কী করে বোঝাব , অফিস বন্ধ। রাষ্ট্রও কী বন্ধ ?
৩ মাস পর স্ত্রীর বাচ্চা ডেলিভারি হবার কথা। গর্ভাবস্থায় শিশুটি নড়াচড়া করছে, পেটের কাছে কান রাখলে শব্দ শোনা যায়। ডাক্তার বলেছে এই সময় কমলালেবুর রস, তরমুজ, জাম্বুরা খেতে। ডেলিভারির জন্য পয়সা জমিয়ে রাখতে হবে। কে দেবে পয়সা ? ৩ মাস তো দূরের কথা, সরিষার তেল নেই বাসায়। তাদের কী করে বোঝাব, ধৈর্য ধর- ট্রাম্প , পুতিনরা মিলে সবাই চেষ্টা করছে।
টেলিভিশনে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী রেশন দেবার ব্যবস্থা করেছে। অনেকেই নাকি পাচ্ছে। যারা কোথাও কিছু পায় নি আমরা সেই অভাগা ! ডিশের লাইনের লোক টাকা না পেয়ে লাইনটা কেটে দিল। আমার স্ত্রী আর বাচ্চারা যা একটু টিভি দেখত সেটাও বন্ধ। দু রুমের একটা বাসায় একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের আর করার কিছু থাকে না। বাসায় আরও তিন ছেলে মেয়ে আছে। এক মুঠো ভাত ভাগ করতে করতে কিছুদিন পর হয়তবা এক প্লেটেই খেতে হবে সবাইকে।
বাকি দোকানের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে সপ্তাহ খানেক আগে। রাষ্ট্র ? রাষ্ট্র তো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই না? যারা শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, যারা লুট করে বড় বড় সব ব্যাংক খালি করে দিয়েছে রাষ্ট্র কী তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বলতে পারে না, আমার স্ত্রীর ডেলিভারির খরচটা অন্তত দিয়ে দিতে।
আমার মায়ের বুকে ব্যথা উঠলে, আমার বুক যেরকম নীল হয়ে উঠে তাদেরও নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও এমন হয়। একটু কী বুঝিয়ে বলা যায় না ? বাকি দোকানের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে সপ্তাহ খানেক আগে। রাষ্ট্র? রাষ্ট্র তো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই না?