শরিফুল হাসান: ৫২ জন মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেল! জীবনের এমন করুণ পরিনতির নামই বোধহয় বাংলাদেশ। একটু অপেক্ষা করেন জানতে পারবেন, কারখানার ভেতরে কেমিক্যাল ছিল। এরপর শুনবেন বের হওয়ার সিড়ি বন্ধ ছিল। তারপর জানবেন ফায়ার সেফটি সামগ্রী যথাযথভাবে ছিল না। আরও পরে জানবেন ভবনটা নিরাপদ ছিল না। সবশেষে হয়তো শুনবেন বহু ধরনের অনুমোদন ছিল না।
আফসোস! বছরের পর বছর ধরে একই গল্প। সাংবাদিক হিসেবে বহু আগুনে পোড়া লাশ দেখতে হয়েছে। গল্পগুলো একই রকম। একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে বহু অনুমোদন নিতে হয়। শুধু অনুমোদনেই শেষ না এই দেশে সরকারের নানা দপ্তর আছে যাদের কাজ নিয়মিত এগুলো তদারকি করা। কিন্তু প্রত্যেকটা দুর্ঘটনার পর একই কথা শুনবেন। এই রাষ্ট্রের সবাই যেন ঘুমাচ্ছিল! কারও যেন কোন দায় নেই।
তবে এখন দেখবেন, কয়েকটা কমিটি হবে। আগামী কয়েকদিন এ নিয়ে ঢের আলোচনা হবে। তারপর আবার সব হারিয়ে যাবে। এরপর আবার একই দুর্ঘটনা। একই গল্প। লঞ্চ ডুবলে শুনবেন অনুমোদন নেই। ভবনে আগুন লাগলে অনুমোদন নেই। গাড়ি দুর্ঘটনার পর ফিটনেস নেই। অথচ নানান কর্তৃপক্ষ আছে! ঘুষপ্রথা আছে! তদন্ত কমিটি আছে! নেই শুধু মানুষের জীবনের দাম!
মাঝে মধ্যে ভীষণ কান্না পায়। অসহায় লাগে। স্মৃতিতে ভেসে আসে নিমতলীল আগুন কিংবা নিশ্চিন্তপুরে গার্মেন্টসে পোড়া শত লাশ। কোনদিনও কী আমি ভুলতে পারবো স্কুল মাঠে রাখা শত শত লাশের কথা। পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটা কঙ্কালের নাকের নোলক দেখে একটা লাশ খুঁজে বের করেছিল পরিবার। আমার চোখের সামনেই ঘটেছিল ঘটে।
আমার আজও ভীষণ কান্না পায়।
আচ্ছা এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করা কি খুব কঠিন কাজ? এগুলো তদারকি করা কি খুব কঠিন কাজ? হ্যাঁ কঠিন কাজ ততোদিন যতদিন এই দুর্নীতি ঘুষ প্রথা থাকবে। অসম্ভব ততোদিন যতোদিন শত মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পরেও দায়িত্বে অবহেলার কারণে কারো ফাঁসি হবে না।
মাঝে মধ্যে ক্রোধে আমার চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। কারণ আমি জানি এই দেশে সাধারণ মানুষের আর্তি কখনো বন্ধ হবে না। বরং এভাবেই বারবার বাবা-মায়ের কাধে উঠবে সন্তানের লাশ, সন্তান কাঁদবে মায়ের জন্য। ভাই নিয়ে যাবে বোনের লাশ, বোন অপেক্ষা করবে ভাইয়ের লাশের। আমরা সব জানি শুধু জানি না কবে থামবে এই আহাজারি-‘ও স্যার, আমার মায়ের হাড্ডিগুলা খুইজ্জা দেন স্যার।’
লেখক: সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী