আরিফ আজাদ: ধরুন, বাসের ভাড়া দিয়ে নেমে দেখলেন, ভাংতি হিশেবে হেল্পার আপনাকে যে বিশ টাকার নোটটা ধরিয়ে দিয়েছে সেটাতে তিনটা তালিজোড়া। আপনাকে নিতান্তই অসাবধান এবং সরল পেয়ে বেচারা হাসতে হাসতেই তার ‘চালাতে না পারা’ নোটখানা ধরিয়ে দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
বাস থেকে নেমে আপনি রিক্সায় উঠলেন। রিক্সা ভাড়া চল্লিশ টাকা। মোক্ষম একটা সুযোগ এলো আপনার হাতে— হেল্পারের ধরিয়ে দিয়ে যাওয়া ছিঁড়ে-ফাঁড়া বিশ টাকার নোটটাকে অন্য একটা বিশ টাকার নোট, কিংবা দুটো দশ টাকার নোটের সাথে মিশিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালার কাছে আপনি তা অনায়েশে চালিয়ে দিতে পারেন। বেচারা টের পেলে তো পেলোই, না পেলে নির্বিঘ্নে আপদটা অন্যের ঘাঁড়ে উঠিয়ে দেওয়া গেলো!
কিন্তু, সেই ছেঁড়া-ফাঁড়া বিশ টাকার নোট অন্য নোটের সাথে মিশিয়ে রিক্সাওয়ালাকে গছাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পারলেন না। আপনি ভাবলেন— কেউ একজন আমার সাথে অন্যায় করেছে বলে সেই একই অন্যায় আমি অন্য একজনের সাথে করতে পারি? এমনও তো হতে পারে, এই ছেঁড়া নোট রিক্সাওয়ালাটা কোথাও চালাতে পারলো না। এই নোট চলবে না বলে তাকে দোকানদার চাল না দিতে পারে, ওষুদের দোকানদার ওষুদ না দিতে পারে, এমনকি, নিজের মেয়ের জন্য একটা খেলনা কিনতে গেলেও এই নোটের কারণে তাকে ফেরত আসতে হতে পারে।
মানিব্যাগ থেকে নোটটা বের করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বের করা হলো না আপনার। রিক্সাওয়ালাকে চকচকে দুটো বিশ টাকার নোট দিয়ে ছেঁড়া নোটটাকে মানিব্যাগের অবহেলিত কোণটায় গুঁজে রাখলেন।
এই যে শেষ মুহূর্তের এই বোধ— এটা হলো তাকওয়া। এই কাজটার সাক্ষী কেবল আপনি আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা। দুনিয়ার আর কেউ এই ব্যাপারে জানে না। না আপনাকে ধোঁকা দিয়ে যাওয়া সেই বাসের হেল্পার, না ধোঁকায় ফেলতে গিয়েও ফেলতে না পারা রিক্সাওয়ালা— কেউ না।
হতে পারে, কেবল এমন একটা অতি-ক্ষুদ্র কাজের জন্য আখিরাতে আপনি জান্নাতে পৌঁছে যাবেন। হতে পারে আপনার সেদিনকার এই কাজটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালার এতো পছন্দ হয়ে যায় যে— তিনি আপনার পূর্বের আর পরের সমস্ত গুনাহ হয়তো মাফ করে দেবেন।
কখনোই কোন ভালো কাজকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এড়িয়ে যাবেন না সেটা যতো ক্ষুদ্র-ই হোক না কেনো। ওই কাজটাই হয়ে উঠতে পারে আখিরাতে আপনার নাজাতের চাবিকাঠি।
লেখক: বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক