কথায় আছে “কালোজিরা কালো হিরা” এই কথাটি একদম সঠিক কথা। আর এই কালো হিরা বা কালোজিরা ফুল থেকে মৌমাছি যে মধু সংগ্রহ করে, তাকেই বলা হয় কালোজিরা ফুলের মধু। আমরা সবাই কমবেশি মধু এবং কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জানি। তাই অনেকেই মধুর বিশেষ উপকারিতা পাওয়ার জন্য কালোজিরা ফুলের মধুর সন্ধান করেন। সব রোগের মহৌষধ কালোজিরা।
ঘন, মিস্টি, সুস্বাদু, মনোমুগ্ধকর, এই মধুতে আছে অন্যান্য মধুর তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ উপকারিতা। আছে মন মাতানো স্বাদ গন্ধ। পুষ্টি গুনে ভরা এই মধুতে সেবনে জানা-অজানা হাজারও উপকার পাওয়া যায়। কালোজিরা ফুলের মধু বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কোনটি খাঁটি মধু এবং কোনটি ভেজাল মধু এটা বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতেই হবে। না হলে কিন্তু আপনি আসল নকল মধু বুঝতে পারবেন না।
কালোজিরা ফুলের মধু কি?
এক কথায় কালোজিরা ফুলের মৌসুমে, মৌমাছি কালোজিরার ফুল থেকে যেই নেকটার সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে যেই মধু তৈরি করে আমরা তাকেই কালোজিরা ফুলের মধু বলি।
কালোজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য:
মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে আপনি যে মধু কিনছেন তা খাঁটি না ভেজাল তা বুঝতে পারবেন না।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একেক ফুলের মধুর একেক রকম বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমনঃ স্বাদ, গন্ধ, রং ও ঘনত্ব এর বেশ পরিবর্তন থাকে। যেমনঃ লিচু ফুলের মধু, সরিষা ফুলের মধু, সুন্দরবনের মধু যাদের রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য । সব ফুলের মধুরই আছে ভিন্ন ভিন্ন গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য। এজন্য কালোজিরা ফুলের মধুরও আছে ইউনিক কিছু বৈশিষ্ট্য।
পড়ুন: মধুর বৈজ্ঞানিক গুণাগুণ
কালোজিরা মধু অনেকটাই খেজুরের গুড় এর মতো দেখতে। এ মধুর স্বাদ একদম খেজুরের গুড়ের মতো। তবে ভুলে গেলে চলবে না, মধু তো মধুই। সেটা কখনোই গুড় নই। স্বাদ গুড়ের মতো হলেও গন্ধ কিন্তু গুড়ের মতো না। বেশ আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর। আরেকটি জিনিষ মনে রাখতে হবে, আমাদের অনেকেই বলে থাকেন যে মধু খুব মিষ্টি। তাদের উদ্দেশে বলছি, জি ভাই মধু খুব মিষ্টি। কারণ মধু চিনির থেকে ১ থেকে ১.৫ গুন বেশি মিষ্টি হতে পারে।
মধুর ঘনত্ব ডিপেন্ড করে পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া, তাপমাত্রা, মধু পরিপক্ব কি না এবং মৌচাষির উপরে। তবে আমাদের দেশে যে মধু বিক্রি হয় তা সাধারণত ১৮% থেকে ২৫% পর্যন্ত জলীয় উপাদান থাকে। অনেক সময় কিছু কম বেশ হয়। জলীয় উপাদান যত কম হবে মধু তত ঘন হবে
কালোজিরা ফুলের মধুর উপকারিতা:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কালো জিরা ‘সাম (মৃত্যু)’ ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ। (সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ ৫২৮৫)
মধুর বহুমূখী গুনাগুন সম্পর্কে অধিকাংশ লোক অবগত নন। সাধারন মানুষ ভেবে থাকেন কিছু রোগ আরোগ্যেই এর প্রয়োগ হয়ে থাকে মাত্র। কিন্তু মধু যে একটি উত্তম আহার্য্য ও পানিয় সে বিষয়ে সবাই জ্ঞাত নন। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে মধুর গুনাগুন জানতে পেরে পাশ্চাত্য দেশের বহু লোক মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির সচেষ্ট হয়েছেন।
মধু শীতলকারী, হাল্কা, স্বরপূর্ণ, রুক্ষ, সহজ পাচ্য লেখন চোখের পক্ষে হিতকারি, ক্ষুধা, বর্ধক (দীপন), শ্বরশোধক মখের ব্রণ নির্মূলক, তকের উজ্জলতা বর্ধক, শরিরের সৌন্দর্য বর্ধক, সুখপ্রদানকারী, আহ্লাদ কত্তা, অত্যন্ত প্রসন্ন প্রধানকারী,মস্তিস্কের কর্মশক্তি বর্ধক,বৃষা বিষদ ও বোচক গুন সম্পন্ন মধুতে কুন্ঠ,বর্মন,শ্বাসকষ্ট,হিক্কা আর আতসার প্রভূতি রোগ ভলো হয়।এছাড়া ও কাশি, বক্তাপত্ত, কফ, প্রসেহ, কৃমি, ক্লম, মেদরোগ, তৃষ্নাবৃত্তির প্রাবল্য যক্ষ্মা প্রভৃতি ব্যাধিতে ও মধুর ব্যবহার খুবই ফলপ্রদ।
মধুর পুষ্টিগুণ:
সাধারন মানুষ জানে না যে মধুর মধ্যে কত ধরনের আর কি পরিমান খাদ্য মূল্য সঞ্জিত হয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা বলেন মানব শরীরের পক্ষে অত্যাবশ্যক ৮০ প্রকারের প্রয়োজনীয় মৌল উপাদান মধুর মধ্যে পাওয়া যায়।
মধুতে নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিনের অভাবে আমাদের শরীর বেরিবেরি, রিকেট, স্কার্বি প্রভূত জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। মধু খেলে শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিন ও ঢুকতে পারে। বি-১, বি-২, বি-৩ ,বি-৫, বি-৬, বি- ই আর কে ভিটামিনের সন্ধান ও মধুতে পাওয়া গেছে।
ভিটামিন বি-২-১.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১-০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-৬-৫.০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি-৫.৪ মিলিগ্রাম। মধুর ব্যবহার তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে এত ব্যপক ও বহুমুখী। এতবেশি খাদ্য মূল্য এর মধ্যে রয়েছে যে, প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ এমনকি বর্তমানের বৈজ্ঞানিক যুগেও মধুর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।