নারী গৃহকর্মীদের বিনা খরচে মধ্যপ্রাচ্য যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা বাগিয়ে নিচ্ছেন দালালেরা। তারা কর্মী পাঠাতে নানা ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বয়স লুকিয়ে ও নকল সনদ সরবরাহ করে নারী গৃহকর্মীদের পাঠানো হচ্ছে সেখানে। বিদেশে নির্যাতিত হয়ে চুক্তির আগেই দেশে ফিরে আসছেন অনেকে।
দেশে ফিরে আসা নারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ নারী গেছেন দালালের (সাব-এজেন্ট) মাধ্যমে। এঁদের ৬৫ শতাংশের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন দালালেরা। নানা কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা ফরিদপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার ২৬২ জন নারী কর্মীর ওপর গবেষণাটি চালানো হয়েছে। ৪ এপ্রিল গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশে পাঠাতে বেশির ভাগ নারীর কাছ থেকে দালাল টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২ শতাংশের কাছ থেকে ১ লাখ টাকার বেশি নেওয়া হয়েছে। ২০ শতাংশ নারী ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। ২৮ শতাংশ নারী ২০ থেকে ৫০ হাজার ও ১৫ শতাংশ নারী ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন বিদেশে যেতে।
নারী গৃহকর্মীদের মধ্যপ্রাচ্য যেতে কোনো টাকা লাগার কথা নয়। পদে পদে নানা অনিয়ম করে পাঠানো হচ্ছে কর্মী।
জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বিশ্বের ১৭টি দেশে কাজ করতে যান নারী কর্মীরা। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ নারী যান মধ্যপ্রাচ্যে। আর মোট কর্মীর ৪০ শতাংশই যান সৌদি আরব। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হলেও নারী কর্মীর যাওয়া বাড়তে শুরু করে ২০১৫ সাল থেকে। এরপর থেকে বছরে এক লাখ নারী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। ওকাপের গবেষণা বলছে, এক বছরের মধ্যেই ফিরে এসেছেন ৫৮ শতাংশ।
তৃণমূল পর্যায়ে অভিবাসীদের নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওকাপ। ফিরে আসা প্রবাসীদের পুনরেকত্রীকরণ, ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা প্রদান, আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা, মানব পাচার প্রতিরোধ ও বিদেশে যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অভিবাসীদের নানা সহায়তা দিয়ে থাকে সংস্থাটি।
ওকাপের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কর্মী পাঠাতে নানা অনিয়মের কারণে বেশি হারে ঝুঁকি তৈরি হয়। এটি বন্ধ করতে হলে দালালদের বৈধ প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। এরা রিক্রুটিং এজেন্সির হয়ে কাজ করে। তাই এজেন্সিকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।