স্কুল জীবন থেকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান (২৮তম) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সে সুবাধে উচ্চশিক্ষায় তার পছন্দের বিষয় ছিল ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় মেরিট অনেক পেছনে থাকায় নিজের পছন্দের সাবজেক্ট পাননি তিনি। পড়তে হয়েছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে। সম্প্রতি একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই এ গল্প জানিয়েছেন।
আখতারুজ্জামানের জন্ম বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কালিপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল হাশেম খান এবং মায়ের নাম ঈরন বানু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক(সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
পরবর্তীতে তিনি ফার্সি ভাষায় পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭-এ ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে ‘রিলিজিয়ন ইন আমেরিকান পাবলিক লাইফ’ বিষয়ে এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল গবেষক হিসেবে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম-এর সেন্টার ফর খ্রীষ্টান – মুসলিম রিলেশনস-এ ‘মুসলিম কমিউনিটি ইন ইউকে’ বিষয়ে গবেষণা করেন।
ভর্তি পরীক্ষায় মেরিট পেছনে থাকায় নিজের পছন্দের সাবজক্টে ভর্তি হতে পারিনি
টিউশন করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়ালেখা করেছি
রাজনৈতিক কারণে আমাকে হল থেকে বের করে দেয়া হতো, তখন অন্য হলে গিয়ে আশ্রয় নিতাম
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান
ঢাবি উপাচার্য বলেন, আমি ছিলাম বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। আমার পড়ার ইচ্ছে ছিল পদার্থবিজ্ঞান অথবা রসায়ন। কিন্তু আমার মেরিট অনেক পেছনে থাকায় পছন্দের এসব সাবজেক্ট পাইনি। তখন নিয়ম ছিল সাইন্সে পরীক্ষা দিয়েও অন্য যেকোন বিষয়ে যাওয়া যেতো। সে সুবাধে সাইন্সের সাবজেক্ট না পেয়ে আর্টসের সাবজেক্টে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, মেধা তালিকায় আমর নাম আসার পর ডিন অফিসে যখন ভাইভা দিতে গিয়েছিলাম তখণ আমি স্যারকে বলেছিলাম, স্যার আমাকে পদার্থবিজ্ঞান দেন। স্যার বললেন, বাবা এটা আরও অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে; এটা তুমি পাবে না। তারপর বললাম স্যার আমাকে রসায়ন দেন তখন তিনি বললেন এটাও হবে না।
‘‘তারপর ডিন স্যার বললেন, যাও তুমি যেহেতু এভাবে চাচ্ছো, তুমি অধ্যাপক এমআর তরফদারের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যাও। তোমাকে এ ডিপার্টমেন্ট দিলাম। তৎকালীন ডিন অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম স্যার আমাকে মূলত এ বিভাগটি দেন।’’
১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ের এবং ২০১৫-সালে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কলা অনুষদের নির্বাচিত ডিন হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। পেশাগত জীবনে ১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারি অধ্যাপক, ২০০০ সালের ২ জানুয়ারি সহযোগী অধ্যাপক এবং জানুয়ারি ২০০৪ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
আখতারুজ্জামান ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ মেয়াদে তিন দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ ও ২০১১ এ সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ০৩ নভেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব লাভের পর থেকে এখনো উপাচার্য পদেই আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর টিউশন করেছেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিন বলেন, হল লাইফে আমার সময়টা খুব ব্যস্ততায় কেটেছে। যদি বলেন কীভাবে? তাহলে বলবো আমাকেও বাকি আট-দশজনের মতো কর্ম করেই চলতে হয়েছে। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই টিউশন শুরু করেছিলাম।
উপাচার্য বলেন, আমি যেহেতু গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি এসব ভালোভাবে জানতাম সে জায়গা থেকে আমার টিউশনের অভাব ছিল না। আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক টিউশনি করেছি। কম দামের টিউশন থেকে বেশি- সব ক্যাটাগরির টিউশনি আমি করেছি। টিউশনি শেষ করার পর আমার আর কোথাও জব করতে হয়নি। আমার অফিসিয়াল চাকরি জীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমার সৌভাগ্যক্রমে হয়েছে।
ক্যাম্পাস লাইফে ঢাবি উপাচার্যের আনন্দদায়ক বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে পুরো ছাত্র জীবনটাই মজার ছিল। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অধ্যায়টা ছিল আরও মজার। আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরো সময়টা হলেই কাটিয়েছি। এ সময়টাতে আমাকে অনেক অনিয়মের মধ্যে কাটাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি শহীদুল্লাহ হল, জহুরুল হক এবং মহসিন হলে কাটিয়েছি। কিন্তু আমি ছিলাম সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী। হলে থাকালীন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে আমাকে হল থেকে বের করে দেয়া হতো। মহসিন হল থেকে বের কলে দিলে অন্য আরেকটা হলে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। এভাবে একাধিক হলে আমার থাকার অবিজ্ঞতা হয়েছে। এসব হলের জীবনযাত্রার মান কেমন সেটা বললে অনেক সময় ফ্লোরে বা বাইরে কাটাতে হতো। তবে এসব হলে আমার বন্ধুরা থাকায় তেমন সমস্যা হতো না।
হলের জীবনে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য আরও বলেন, হল থেকে বের করে দেয়া হলে নতুন হলে উঠলে ক্যান্টিনে যখন খেতে যেতাম তখন তারা প্রথমে ভাবতো আমাদের ছাত্র। যখন আস্তে আস্তে পরিচিত হতাম তখন আমাকে বক্র চোখে দেখতো। এসব অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। অনেকে বহিরাগত বলেও সম্বোধন করতো।