আহমদ আবদুল্লাহ: ভালোবাসা থাকলেই যে সব সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় ব্যাপারটা অনেক ক্ষেত্রে সত্যি না। অনেক কারণে ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও একটা সংসার ভাঙগনের মুখোমুখি যেয়ে দাঁড়াতে পারে। নিচে এর কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো-
অতিরিক্ত দখলদারি দেখানো
সবকিছুতে অতিরিক্ত দখলদারি দেখালে, সন্দেহপ্রবণতা থাকলে, সম্পর্ক গোড়া থেকে নষ্ট হয়ে যায়। একজন মানুষকে শক্ত করে বেঁধে রাখতে চাইলে, স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সম্পর্ক থেকে তার মন উঠে যেতে থাকে এবং সে মিথ্যা বলতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে সম্পর্কে যেরকম একটি আর্থিক বন্ধন থাকা জরুরি, তেমনি প্রতিটি মানুষের নিজস্বতাও জরুরি।
ব্যক্তিগত সময় না দেয়া
প্রত্যেকটি মানুষের কিছু পার্সোনাল স্পেস বা ব্যক্তিগত স্থান ও সময় প্রয়োজন হয়; তা সে আপনার যত আপন মানুষ হোক না কেন! সম্পর্কের অর্ধেক পার্টনার হিসেবে আপনি যদি একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ সময়টুকু দাবি করেন, জোর দেন যে তার পৃথিবী আপনাকে কেন্দ্র করে ঘুরবে, তাহলে সেটা নিতান্তই বোকামি এবং নিঃসন্দেহে সামনের ব্যক্তির উপর অত্যাচার। তাই নিজের অত্যন্ত কাছের মানুষগুলোকে অবশ্যই দিনের কিছুটা সময় হলেও, তার নিজের সাথে কাটাতে দিন। পার্সোনাল স্পেস মানসিক সুস্থতার জন্য, এবং পরোক্ষভাবে সম্পর্কের উন্নতির জন্য জরুরি।
অপরের বন্ধু, পরিবারের সাথে সময় কাটাতে না দেয়া
আপনি যদি আশা করেন, (মূলত দাম্পত্য সম্পর্কে, স্বামী বা স্ত্রী যদি মনে করেন) যে আপনার লাইফ পার্টনারের সময়ের উপর শুধু আপনার অধিকার, তার নিজের বন্ধুদের সাথে বা পরিবারের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারবেনা বা সম্পর্ক থাকলেও সে তাদের সাথে সময় অতিবাহিত করতে পারবে না, তবে আপনাদের সম্পর্ক মধুর হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ! মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক খুবই জরুরী। আর একজন মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে, কখনোই ভালো সম্পর্ক রক্ষা করতে পারবেন না।
অতিরিক্ত কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ
সম্পর্কে দুজন মানুষের সমান গুরুত্ব থাকে। একে অপরের মতামতের, সিদ্ধান্তের এবং মতাদর্শের সম্মান করাটা খুবই জরুরী। কিন্তু একজন যদি মনে করে, সম্পূর্ণ সম্পর্কের প্রতিটি সিদ্ধান্তই তার মত অনুযায়ী হবে এবং পার্টনারের জীবনের সম্পূর্ণটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, সেক্ষেত্রে অপরজন সঠিক মতামত প্রকাশ করতে পারেন না। একজনের অতিরিক্ত কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ সম্পর্কের ফাটলের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অসম্মানসূচক বাক্য ব্যবহার
যেকোন সম্পর্কে কথা কাটাকাটি আর ঝগড়া স্বাভাবিক। কিন্তু ঝগড়ার সময় একজন যদি অনবরত আরেকজনকে অসম্মান করে কথা বলেন, গালিগালাজ করেন এবং এমন সব শব্দ ব্যবহার করেন, যা সামনের ব্যক্তিকে আঘাত করে, তবে তা সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে। হয়তোবা মনোমালিন্যের কারণ খুব শিগগিরই দূর হয়ে যায়, কিন্তু মুখ থেকে নিঃসৃত সেই কথাগুলো সামনের ব্যক্তিটির মনে এমন দাগ কেটে যায়, যা হয়তোবা খুব শিগগিরই দূর হয়না।
তার বা নিজের ক্ষতি করার হুমকি দেয়া
ব্ল্যাকমেইল করে তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য হাসিল হলেও, দীর্ঘমেয়াদি সময়ে সম্পর্কের উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। তাই নিজের মত কোন কিছু না ঘটলে, অথবা কিছু চেয়ে না পেলে, নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার হুমকি দেয়া, আর নিজের হাতে সম্পর্ককে হত্যা করা একই কথা। সম্পর্কে উপস্থিত দুইজনের মাঝে যে কারো এই অভ্যাস থাকলে, সেই সম্পর্কের পরিণতি সুখের হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
অনবরত দোষ চাপানো বা অপমান করা
সুন্দর সম্পর্কে উপস্থিত প্রতিটি মানুষই জীবনের সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে, সম্পর্কের একজন ব্যক্তি অপরজনকে অনবরত কিছু না কিছু নিয়ে দোষারোপ করেই চলছে, ছোট করছে, পেছনে টেনে রাখতে চাচ্ছে, তাদের সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা মানে আত্মসম্মানের অবক্ষয়।
অবাস্তব চাহিদা দেখানো
কোন মানুষই পারফেক্ট নয়, জীবনে কখনোই সবকিছু আপনার মন মতো হবে না। সম্পর্কে যদি আপনি পার্টনার থেকে সবকিছু নিঁখুত আশা করেন, অথবা তার থেকে এমন কিছুর আকাঙ্ক্ষা করেন, যা তার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে আপনার অবাস্তব চাহিদা আপনাদের বাস্তব জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অনবরত তুলনা করা
তুলনা এমন একটি জিনিস, যা যেকোন সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীতে কেউ কারো মতো নয় এবং প্রত্যেকের দোষ-গুণ উভয়ই আছে। কিন্তু অন্যের গুণের সাথে আরেকজনের তুলনা করলে, কখনো জীবনে সুখে থাকা যায় না।
অন্যের অস্তিত্বকে গুরুত্ব না দেয়া
সম্পর্ককে বা সম্পর্কে উপস্থিত মানুষটাকে ‘ফর গ্র্যান্টেড’ নেয়া এবং সম্পর্কের জন্য কিছু করার প্রয়াস না থাকা, সম্পর্ককে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। ‘সে আছে, এবং সে থাকবেই’- এরকম মানসিকতা আমাদের সম্পর্কের জন্য কাজ করতে পিছিয়ে দেয়। কিন্তু আসলে প্রতিটি সম্পর্কই ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই সুন্দর থাকে।
অনেক সময় যেই সম্পর্ক আমাদের মানসিক ক্ষতির কারণ, সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা দোষের নয়। নিজেদের মাঝেও এই অভ্যাসগুলো থাকলে, তা দ্রুত পরিত্যাগ করে, আমরা আমাদের সম্পর্কগুলো ভাল রাখতে পারি।
লেখক: অনলাইন এক্টিভিস্ট