শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, নতুন কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ কারিকুলামের পরিবর্তন আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। কারিকুলামের সঙ্গে জড়িত আছেন শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ ও টিচিং-লার্নিং স্পেশালিস্টসহ অনেকে। সুতরাং আমি একা চাইলেই বা আর কেউ চাইলেই কারিকুলাম পরিবর্তন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে সাক্ষাৎ করতে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারিকুলাম আসলে প্রতিফলিত হয় পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে। মূল্যায়ন পর্যায়ে পাঠ্যবইয়ে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেগুলো তো অবশ্যই পরিবর্তনযোগ্য। প্রতি বছরই পাঠ্যবইয়ে কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে।
তিনি বলেন, কারিকুলামের কন্টেন্টগুলো একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে, সেগুলো আমাদের বিশেষজ্ঞগণ দেখেছেন। কারিকুলামের পরিবর্তন আর পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনে কিন্তু পার্থক্য আছে। কিন্তু আমাদের যে পাঠ্যক্রম বা কারিকুলাম আছে, সেখানে কিন্তু রাতারাতি পরিবর্তন আনা যায় না।
এদিকে, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে গত বছর থেকে চালু করা সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে।
গত বছরও এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। এবারও এটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নতুন করে বিষয়টি সামনে এসেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক একটি অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার পর। বিষয়টি নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠী নানা বিষয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে হোক বা ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে হোক, নানা সময়ে অরাজকতা করার বা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রবণতা তাদের মধ্যে আছে। গত বছরও ছিল।
‘‘একটি সংগঠন কিছু সুপারিশ করেছিল। তারা দাবি করেছে, এখানে (বইয়ে) ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। সেই বিষয়টি তারা নজরে এনেছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করেছি, তখন দেখেছি, শব্দটি ট্রান্সজেন্ডার নয়, থার্ড জেন্ডার। সেটি আইনত স্বীকৃত, যারা বায়োলজিক্যাল কারণে তৃতীয় লিঙ্গ বা সামগ্রিকভাবে সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। তারা এ দেশের নাগরিক। অবশ্যই তাদের নাগরিক সুবিধা আছে।’’
মন্ত্রী বলেন, তবে গল্পটি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি এমনভাবে উপস্থাপনা করা হয়ে থাকে, যেখানে এই ধরনের বিভ্রান্তি বা বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস থাকে, তাহলে গল্পের উপস্থাপনার পদ্ধতি পরিবর্তন করা যায় কি না, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, মূল লক্ষ্য একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা, তাদের নাগরিক অধিকার আছে, তার প্রতি সবার সম্মান প্রদর্শন সেই বিষয়টিকে সঠিকভাবে ধরে রেখে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকে, তা বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে মতামত দেবেন। এটি বিশেষায়িত বিষয়। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী জায়গায় থেকে তিনি (মন্ত্রী) মন্তব্য করতে চান না।