জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় রোখসানা নামের এক নারীকে তালাক দিছে তার স্বামী। এইটা নিয়ে আপনি কোনো কথা শুনবেন না, শুনবেন- প্রকাশ্যে চুমু খাইলে! এইদেশের লোকেরা অদ্ভুত, বিবাহিত এক লোক তার বউকে প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছে এরকম একটা ছবি দেখলেও এদের জাত যায়, অশ্লীল লাগে। কিন্তু বউ পেটানোতে দুনিয়ায় চতুর্থ হইলে তাদের কিছু যায় আসে না, লজ্জাও লাগে না!
বাংলাদেশের লোকেদের বেশিরভাগেরই প্রথম পছন্দ অন্যের জীবনে খবরদারি করা আর সেই হিসেবে বাংলাদেশের পুরুষদের বেশিরভাগের প্রিয় কাজ হলো নারী নির্যাতন করা। বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক নারীরাও এইসব পুরুষদের দারুণ বন্ধু। আমি এক অতি প্রগতিশীল পরিবারর চিনি, সেই পরিবারে এক বিয়ে হওয়ার সময় সেই পরিবারের প্রধান কর্ত্রী বেঁকে বসছিলেন। কেন জানেন? উনার ছেলের হবু বউ স্নাতক পাশ একটা মেয়েকে তিনি চাকরি করতে দিবেন না। আমি শিউরে উঠি যে প্রগতিশীল পরিবারের এই অবস্থা হইলে অপ্রগতিশীলদের কি অবস্থা?
এইদেশের প্রগতিশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, ধার্মিক, অধার্মিক, দলীয়, নির্দলীয় প্রায় সব পুরুষেরই প্রিয় কাজ হলো- নারী নির্যাতন। আর এই নারী নির্যাতনের সহায়ক ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের আপামর পুরুষতান্ত্রিক নারীরা, এরা ছেলের বউ, নিজের বোন, সহকর্মী নারী বলতে বোঝে দাসীবৃত্তি- ও ওই কাপড় পরলো ক্যান, অমুক পোলার সাথে ঘুরলো ক্যান, বয়সকালে বিয়ে করলো ক্যান, বিয়ে করলো না ক্যান- এদের ক্যান ক্যান করার শেষ নাই।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশের বেশিরভাগ পুরুষরা নারীর পেট থেকে জন্মান নাই, জন্মাইছেন ফুলের টোকাটুকিতে, নাইলে তারা এতো নারীবিদ্বেষী ক্যান?
ভালবেসে বাংলাদেশে চুমু খাইতে গেলে সমস্যা হবে, প্রকাশ্যে ভালোবাসার কথা বললে সমস্যা হবে, কারণ ভালোবেসে চুমু খাওয়া এইদেশের সংস্কৃতি না, ভালোবাসার কথা বলা অপসংস্কৃতি। কিন্তু বউ পেটানোতে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করলে এদের গর্বে মাটিতে পা পড়বেনা, কন্যা হইলে তালাক দিলে এদের মুখে রা’ও সরবেনা। মেয়েমানুষদের না পেটাইলে, মেয়ে মানুষ জন্মাইলে তালাক না দিলে কি পুরুষত্ব থাকবে তাদের? অতঃপর তাদের কোন অবদানকে অস্বীকার করবেন আপনি?
লেখক: অনলাইন এক্টিভিস্ট