Site icon The Daily Moon | Popular Bangla News | National | International | Education | Entertainment | Religion | Employment

বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নিতে চায় মালদ্বীপ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে যে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ মালদ্বীপ বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ গত নভেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ফোন করে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেন

ওই আলোচনার সময় উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়েও সম্মতি প্রকাশ করেন।

মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, খুব শিগগিরই দু দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হবে এবং তখন তাদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নেওয়া এবং সরাসরি জাহাজ চলাচলের মতো বিষয়গুলোও থাকবে।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় পররাষ্ট্র ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে মালদ্বীপকে বালু ও পলিমাটি নেওয়ার এ প্রস্তাব বাংলাদেশই প্রথম দিয়েছিল আরও অন্তত চার বছর আগে।

বাংলাদেশে তখন বিশেষ করে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাজ শুরুর সময়ে এটি আলোচনায় এসেছিল কারণ ওই বন্দরের জন্য পটুয়াখালীর রামনাবাদ চ্যানেলে ব্যাপক ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ড্রেজিং ডিস্পোজাল অর্থাৎ ড্রেজিং করে যে বালু ও পলি সরানো হয় সেগুলো রাখা বা সরানোটা ড্রেজিংকে ব্যয়বহুল করে তোলায় বিশেষজ্ঞরা এগুলো রপ্তানির প্রসঙ্গটি সামনে এনেছিলেন বলে জানা গেছে।

হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এম নাজমুল হাসানও বলেন যে, কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ এমন প্রস্তাব মালদ্বীপকে দিয়েছিল। কিন্তু পরে নানা কারণে তা নিয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।

“গত বছর আমি দায়িত্ব নিয়ে আসার পর মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শ অনুযায়ী এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি কিন্তু করোনার কারণে খুব বেশি অগ্রসর হওয়া যায়নি। তবে সম্ভাবনাটি অত্যন্ত উজ্জ্বল। কিছু সমস্যার সমাধান করা গেলে এটি বাংলাদেশের জন্য দারুণ বিষয় হবে বলে আশা করছি,” বলেন নাজমুল হাসান।

তিনি বলেন, তারা এখন দু দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্ভাব্য সফর নিয়ে কাজ করছেন এবং আশা করছেন খুব শিগগিরই একটি সফর অনুষ্ঠিত হবে।

“ওই সফরের সময় এসব বিষয় আলোচনায় আসবে। আশা করি এরপর টেকনিক্যাল লেভেলে কাজ হবে এবং আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি হবে। আর তখনি আমরা বলতে পারবো যে আসলে কী পরিমাণ রপ্তানি সম্ভব হবে বা কী প্রক্রিয়ায় সেটা হতে পারে,” যোগ করেন তিনি।

কিন্তু কেন মালদ্বীপ পলিমাটি নেবে

ঢাকায় কর্মকর্তারা বলছেন, মালদ্বীপের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে মূলত এক দশক ধরে এবং ২০১২ সালে দেশটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার পর সেখানে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে।

কিন্তু মালদ্বীপের সাগর থেকে আহরিত বালু দিয়ে নির্মাণ কাজ বা মাটি ভরাটের কাজ করা যায় না বলে দেশটিকে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে পলিমাটি ও বালু আমদানি করতে হয়। মূলত বাংলাদেশের সাথে আলোচনা অগ্রসর না হওয়ায় এক পর্যায়ে এ বিষয়ে ভারতের সাথে একটি চুক্তি করে মালদ্বীপ। পলিমাটি ও বালু নিয়ে ভারতের একটি নীতিমালাও আছে এবং দেশটি মালদ্বীপে রপ্নিতার জন্য একটি কোটাও সংরক্ষিত করে রেখেছে।

রিয়ার এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, মালদ্বীপ দ্বীপভিত্তিক দেশ এবং সেখানে অনেক দ্বীপের ব্যাপক উন্নয়ন করা হচ্ছে। আর আইল্যান্ড বা দ্বীপ তৈরির জন্যই উপরিভাগে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি দিতে হয়।

“আবার কৃষির জন্যও মালদ্বীপ পলিমাটি ব্যবহার করে। তাই কৃষি ও আইল্যান্ড উন্নয়নের জন্য পলিমাটি যেমন দরকার, তেমনি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তাদের দরকার প্রচুর বালু। বাংলাদেশের সিলেটসহ কয়েকটি এলাকার বালুর মান উন্নত বলে এগুলো নিয়ে তাদের আগ্রহ আছে,” বলেন তিনি।

সামনে সম্ভাবনা কতটা

বুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলেন, মালদ্বীপে বালু ও পলিমাটি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় বাধা হল পরিবহন সমস্যা।

তিনি বলেন, দু’ দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল চুক্তি না থাকায় বাংলাদেশ থেকে জাহাজকে সিঙ্গাপুর হয়ে মালদ্বীপ যেতে হয় বলে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায় অথচ ভারত বা শ্রীলঙ্কা থেকে সরাসরি জাহাজ মালদ্বীপ যেতে পারে বলে তাদের পরিবহন খরচ হয় অনেক কম।

মতিন বলেন, সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দ্বীপগুলোতে ব্যাপক ভূমি উন্নয়ন কাজ করতে হবে মালদ্বীপকে।

“তবে বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি ও বালু নেওয়ার কাজটা খুব সহজ হবে না। কারণ এটি ব্যয়বহুল এবং জাহাজ চলাচলের মতো অনেক কিছু জড়িত আছে যেগুলো নিয়ে নীতিনির্ধারকদের অনেক কিছু করণীয় আছে। সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারলে অবশ্য সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।”

তবে মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন তারা আশা করছেন যে এবার দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সরাসরি জাহাজ চলাচলে একমত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দ্রুতই অগ্রগতি হবে।

Exit mobile version