আজ ৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। প্রতি বছর ৩ মে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তথ্য জনগণের পণ্য’।
১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে, ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা এ দিবসটি পালন করে আসছেন।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় দিবসটিতে।
জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রোববার (২ মে) মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি বার্তা প্রচার করা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব ‘উইন্ডহোক ঘোষণার ৩০ বছর’ শীর্ষক বাণীতে গণমাধ্যম বিষয়ে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় আমরা বিশ্বব্যাপী যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি- সেগুলো জীবন বাঁচাতে, শক্তিশালী, স্থিতিশীল সমাজ গঠনে নির্ভরযোগ্য, যাচাইকৃত এবং সর্বজনীন ভূমিকাকে চিহ্নিত করে। মহামারি এবং জলবায়ুর জরুরি অবস্থাসহ অন্যান্য সংকটময় সময়ে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষতিকর ভুল এবং মিথ্যাচারকে মোকাবিলাসহ আমাদের দ্রুত পরিবর্তিত ও প্রায়ই অপ্রতিরোধ্য তথ্যের দৃশ্যপট তুলে ধরতে সহায়তা করে।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা হলো একটি গণসম্পদ। মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক প্রচার মাধ্যমকে কঠোরভাবে আঘাত করেছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া বাজেট সংকটের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়াও কঠিন হচ্ছে। আমি সব সরকারকে তাদের ক্ষমতানুযায়ী একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুমুখী প্রচার মাধ্যমকে সমর্থন করার জন্য সবকিছু করার আহ্বান জানাচ্ছি।
গুতেরেস আরও বলেন, ভুল তথ্য এবং অপপ্রচাররোধে মুক্ত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জাতিসংঘ সাংবাদিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। কারণ তথ্য হচ্ছে একটি গণসম্পদ। আজ আমরা একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুত্ববাদী আফ্রিকান সংবাদমাধ্যম উন্নয়নের জন্য উইন্ডহোক ঘোষণাপত্রের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি।
দিবসটি উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোভিড ১৯ অতিমারিকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পেশাগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। বহু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত কিংবা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। তাই মুক্ত গণমাধ্যম এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাধীন ও পেশাদার গণমাধ্যমের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল গাজী টিভি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারা বাংলার প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন নানামুখী চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমটা তার নিজের সঙ্গে- যা করতে চায়, সেটা পারছে না। চ্যালেঞ্জ কনটেন্ট-এর। মানুষ যে কনটেন্ট চায়, সেটা মূলধারার গণমাধ্যম দিতে পারে না। চ্যালেঞ্জ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে—যেখানে বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কোনও প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। সামন্ত সংস্কৃতির ব্যবস্থাপনা, যেখানে মালিকের স্বাধীনতাই বেশি। তাই সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। পেশাদার সাংবাদিক তাই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। যারা আছে তারা কোণঠাসা।
এদিকে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। সোমবার দুপুর ৩টায় মানবাধিকার সংগঠন ‘নাগরিক’র আয়োজনে কোভিড অতিমারি, সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে আলোচনায় অংশ নেবেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষক ও ক্রিয়াশীলরা।
৩ মে বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মূল্যায়ন করতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা পেতে এবং সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারানো সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন করবে সংস্থাটি।