Site icon The Daily Moon | Popular Bangla News | National | International | Education | Entertainment | Religion | Employment

গুলশানে তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যুর খবর, যা জানা যাচ্ছে

রাজধানীর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যার পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। তাঁদের বাড়ি কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড়। এক লাখ টাকা ভাড়ায় মাস দুয়েক আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোসারাত। মিরপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঠিক কী কারণেতরুণী আত্মহত্যা করলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রাতেই তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করেছেন।

এদিকে, এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। মামলার বাদী ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান।

বাদী মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তাঁরা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাঁকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তাঁর (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, সবশেষ গত ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তাঁর স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তাঁর (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো।

বাদী নুসরাত এজাহারে বলেন, বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তাঁকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আসামির মা–বাবা আসামিকে কিছু না করলেও তাঁর বোনকে মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে আসামি মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।

বাদী এজাহারে বলেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাঁকে ফোন করে বলেন, আনভীর তাঁকে বকা দিয়েছেন। বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রীর বান্ধবী ‌পিয়াসা দেখেছেন। তিনি তাঁর (আসামির) মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন।

এজাহারে বলা হয়, আসামি মোসারাতকে বলে, তিনি দুবাই চলে যাচ্ছেন, সে যেন কুমিল্লায় চলে যায়। আসামির মা জানতে পারলে তাঁকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন।

এজাহারে নুসরাত বলেন, দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাঁকে ফোন করেন। ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাঁকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাঁকে বলেছেন, তিনি (মোসারাত) তাঁর শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না। মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাঁকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁর বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাঁরা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, নুসরাত তাঁর আত্মীয়স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেন, কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তাঁর বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তাঁর ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।

অভিযুক্ত বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ মঙ্গলবার আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) জাফর হোসেন বলেন, সায়েম সোবহানের দেশত্যাগে পুলিশের করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মুনিয়ার লেখা প্রেম কাহিনীর ডায়েরি উদ্ধার

কলেজছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর ওই ফ্ল্যাট থেকে তার লেখা একাধিক ডাওয়রিও জব্দ করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এই নডায়েরিতে মুনিয়া তার প্রেমের কাহিনী লিখেছেন। যা মুনিয়ার বোন মামলার এজহারেও উল্লেখ করেছেন।

আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলার এজহারে মুনিয়ার বড় বোন বলেছেন, মুনিয়ার লেখা প্রেম কাহিনীর ডায়েরি পুলিশ হেফাজতে নেয়। আমার বোনকে বিয়ে করে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কারণ দেশে থাকলে আসামীর মা-বাবা তারে ছেলেকে কিছু না করলেও আমার বোনকে মেরে ফেলবে।

ময়নাতদন্ত

রাজধানীর গুলশানে অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার মোসারাত জাহান মুনিয়ার ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শেষ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) মুনিয়ার নিথর দেহ নেওয়া হচ্ছে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।

বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত মুনিয়া

মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে নেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুমিল্লার টমছম ব্রিজ কবরস্থানে মুনিয়ার মরদেহ বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্যের জন্য গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আনভীর এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের তরফ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পরে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনিও ফোন ধরেননি।

এছাড়া আনভীরের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও সকাল থেকে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদের সঙ্গে গণমাধ্যমের কথা হয়েছে। তিনি জানান যে তার বিষয়ে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে আনভীরকে পাওয়া যাবে না। মোহাম্মদ বলেন, “হি ইজ আনঅ্যাভেইলেবল।”

Exit mobile version