ঘটনাটা ঘটে বাংলামোটর মোড়ে, প্রায় ১৫ বছর আগে। সিএনজি নষ্টের অজুহাতে চালক নামলো। দুপাশ দিয়ে বিদ্যুৎবেগে দুজন ছিনতাই ছেলে উঠলো। কোলে উঠে বসলো খুব চিকনা আরেকজন। চালক সিএনজিতে টান দিলো। আমার মনে হলো আরে, এটা এখন ঘটছে আমি আসিফ নজরুল এর সাথেই ! সত্যিই কি ঘটছে, খেয়াল করা শুরু করলাম। তারা আমার সাইড পকেট হাতড়াচ্ছে। হাতরানোর সুবিধা করে দেয়ার জন্য বডি আলগা করে দিলাম।
সিএনজি-তে প্রথমে যে ছিনতাইকারী উঠেছে, সে কিছুটা ভদ্রগোছের। বললাম: তুমি এতো স্মার্ট ছেলে, চাকরী করো না কেন? মনে হলো না, জীবনে এমন কিছু শুনেছে সে ছিনতাইকালে। বিরক্ত হয়ে বললো: চুপ করেন তো। চুপ করে থাকা সম্ভব না। কোলের উপর ছেলেটার গা থেকে বোঁটকা গন্ধ বের হচ্ছে। অবাক হয়ে বলি: এইটা আমার কোলে বসছে কেন?
দ্বিতীয় ছিনতাই ছেলেটা রাগী গলায় ধমক দিল। পিছনের পকেটে কি আছে বের করতে বললো। সিএনজি ততক্ষনে শেরাটনের বাঁক নিয়ে মিন্টু রোডের দিকে মুখ ঘুরিয়েছে।
পকেট থেকে জিনিষ বের করার সময় হাটু নিয়ে গুতানোর চেষ্টা করি কোলের ছেলেটাকে। সে আরো জুত করে বসে। আমার মানিব্যাগ আর মোবাইল তাদের হাতে এখন। মানিব্যাগে বেশী টাকা থাকে না, সিটিসেল মোবাইল সেটাটাও নিম্নমানের। দু:খিত কণ্ঠে বলি: আমি গরীব মানুষ, কি আর পাবে আমার কাছে। তারা আবার ধমক দেয়। একজন বলে: চুপ কইরা থাকেন। চোখে মরিচ দিমু নাইলে।
আরো পড়ুন: ভারতে এক মাসে কাজ হারিয়েছে দেড় কোটি মানুষ
সিএনজি মোচড় নিয়েছে কাকরাইল মসজিদের দিকে। চোখে মরিচের বিষয়টা জানি আমি। কিন্ত তবু বেশীক্ষন চুপ থাকতে পারলাম না। বেশী স্মার্টটাকে বললাম: তুমি আমার ফোন নম্বর রাখো প্লিজ। একটা চাকরী যোগাড় করা…
সে এবার কড়াগলায় আমাকে থামতে বলে। মনমরা হয়ে বসে রইলাম। সামান্য পরে ইউ টার্ন করে কাকরাইল মসজিদের সামনে এসে সিএনজি থামলো। স্মার্ট আমাকে বললো, খবরদার, পিছনে তাকাইবেন না। মরিচ ডলা দিয়া দিব তাইলে। তারা আমাকে নামিয়ে দেয়া মাত্র উল্টোদিকের আকাশের দিকে মুখ করে রইলাম। সামান্য পরে রাস্তায় পতনের শব্দ শুনে মুখ ঘুরে তাকালাম। আমার মোবাইল সেট এতোই নিম্নমানের যে রাস্তায় পড়েও ভাঙগলো না সেটা।
মানিব্যাগে মাত্র এক দেড়হাজার টাকা ছিল। সেটা নিয়ে তারা মানিব্যাগ ফেরত দিয়েছে। এখন মোবাইলও ফেরত পেলাম। ছিনতাইকারীদের হৃদয়ের বিশালতায় চোখে প্রায় পানি এসে গেল। কাকরাইল মসজিদ পার হওয়ার সময় হঠাৎ খেয়াল হলো, কিছুদিন আগে জামানী থেকে এসেছি। একশ দশ ইউরো ছিল মানিব্যাগের ভেতরের পকেটে। সেটা নেই? আতিপাতি করে খুজে দেখি নেই। একশ দশ ইউরো মানে দশহাজারেও বেশীটাকা। ছিনতাইকারীদের উপর রাগ হলো হঠাৎ।