আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়্যারম্যান শায়েখ আহমাদুল্লাহ তরুণ আলেমদের প্রতি একটি প্রশিক্ষণধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে তিনি তার পেসবুক পেজের মাধ্যমে তার সাপোর্টারদের মতামত জানতে চান।
উলামায়ে কেরাম যদি নবী-রাসুলগনের অনুকরণে দীনের কাজগুলো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতেন আর পেশা হিসেবে ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদিকে বেছে নিতে পারতেন তাহলে তাঁদের সামাজিক মর্যাদা অনণ্য উচ্চতায় থাকত। সৌদি আরবে প্রায় সব ইমাম খতীবেরই কোন না কোন সাধারণ পেশা আছে। ভারতের বড় বড় দীনি বিদ্যাপীঠের বেশিরভাগ উস্তাযগন কোন না কোন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
ইমামতি, খতীবী করে বিনিময় গ্রহণ করা না জায়েজ নয়। তবে কোন ইমাম খতীব ও মুআযযিন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ছাড়া মসজিদে খেদমত করলে তাঁদের কথার প্রভাব, বক্তব্যের ধার, ব্যক্তিত্বের ভার এবং মতামতের ওজন সাধারণ ইমাম খতীবের চেয়ে যে বহুগুন বেশি সেটা বলাই বাহুল্য।
কেউ বলতে পারেন, অবৈতনিক ইমাম খতীব হলে নিয়মানুবর্তিতা থাকবে না। আমি বলবো, যিনি সত্যিকারের আলেম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইমামতি করবেন এবং তাঁর মধ্যে তাকওয়া থাকবে তিনি তো জামাতে নিয়মিত; বরং তাকবীরে ঊলার পাবন্দ থাকবেন। তিনি অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। সৌদি আরবের বহু মসজিদে আমি কোটিপতি ইমাম খতীব দেখেছি। তাঁরা নিয়মানুবর্তীতা রক্ষা করেন, কোথাও কোথাও সহযোগি ইমাম থাকে। মূল ইমাম (যিনি ফ্রী ইমামতি করবেন) যদি দিনে দুই ওয়াক্ত সালাতও পড়ান, আর সহযোগী দিয়ে বাকিগুলো পড়ানো হয়, তবুও সমাজের চেহারা বদলে যাবে। বিশ্বের অনেক দেশে এখন অবৈতনিক ইমামের ধারা চালু হয়েছে। আর কোন আলেম যদি নিছক টাকার জন্যই নিয়মানুবর্তী হন তাহলে তাঁর মতো লোক দিয়ে দীন ও সমাজের কী-ইবা ফায়দা আশা করা যায়?
এর জন্য মূল বাধা হলো উলামায়ে কেরামের আর্থিক অসঙ্গতি বা বিকল্প উপার্জনের পথ খোলা না থাকা। দ্বিতীয় বাধা হলো মানসিকতা।
ইমামদের বেতন নেওয়া বা না নেওয়াটা মূল বিষয় নয়। তাঁদের আর্থিক অবস্থান দৃঢ় করা ও হালাল উপার্জনমুখী করাটা মূল বিষয়। মসজিদের আশেপাশে থেকেই; বরং আজকাল ঘরে বসেই ইমাম খতীব ও মুআযযিনগন সাবলম্বী হতে পারেন। প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। (ইমাম-খতীবদের কথা বলা হয়েছে নিছক উপমাস্বরূপ। মূলত: অন্য সব সেক্টরে কাজ করা উলামাদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন তরুণ আলেমদের আত্মনির্ভরশীল এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অচিরেই কাজ শুরু করছে ইন শা আল্লাহ। ‘হুজুররা সমাজের বোঝা’ বা ‘তারা আমাদের দানে চলে’ টাইপ তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথা বলার দু:সাহস যেন আর কেউ না দেখাতে পারে, আমরা সেজন্য কাজ করতে চাই। এ জন্য আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সার্বিক সহযোগিতার পরিকল্পনা আছে আমাদের। সারা দেশের চিত্র হয়তো আমরা বদলাতে পারবো না। কিন্তু শুরুটা তো করতে পারবো!