অনেক নামাজি প্রায় একটা সমস্যায় ভুগে থাকেন। সেটা হলো- মাঝেমধ্যেই নামাজের রাকাতসংখ্যা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। আদায়কৃত নামাজ তিন রাকাত হলো না চার রাকাত হলো— বিষয়টি মনে করতে পারেন না। আবার অনেকের নামাজের ভেতরেই সন্দেহ তৈরি হয়।
ফলে কেউ সন্দেহ নিয়ে নামাজ শেষ করেন। আবার কেউ নতুন করে নামাজ আদায় করে থাকেন। এই অবস্থায় কীভাবে নামাজ আদায় করতে হবে বা কীভাবে সমাধান রয়েছে— ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
“নামাজে একাগ্র থাকা নামাজের প্রাণ। এমনভাবে নামাজ পড়তে হবে, যেন আল্লাহ আমাকে দেখছেন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।” (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)
এমন সমস্যার ক্ষেত্রে নামাজির প্রথম কাজ হলো— চিন্তা করে দেখবেন যে, তিনি আসলে কত রাকাত পড়েছেন। তখন প্রবল ধারণা যেটির পক্ষে সায় দেয়, তার ওপর ভিত্তি করে বাকি নামাজ পূর্ণ করবেন। আর যদি নামাজের রাকাতসংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা না হয়, তাহলে কম সংখ্যাটা ধরবেন এবং এ হিসেবে বাকি নামাজ পূর্ণ করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতের পর বৈঠক করে তাশাহহুদ পড়তে হবে। আর শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা আদায় করতে হবে।
রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে করণীয়
আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারো যদি নামাজের মধ্যে সন্দেহ হয়, ফলে সে জানে না যে এক রাকাত পড়ল না কি দুই রাকাত। তাহলে সে যেন এক রাকাত ধরে নিয়ে নামাজ পড়ে। আর যদি দুই রাকাত পড়ল না তিন রাকাত, তা না জানে তাহলে যেন দুই রাকাত ধরে নামাজ পড়ে এবং (এসব ক্ষেত্রে) সালাম ফেরানোর পূর্বে দুইটি সিজদা আদায় করে (অর্থাৎ সাহু সিজদা করে)। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯৮)
নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ যদি কদাচিৎ হয় (নিয়মিত নয়)। তাহলে সেই অবস্থায় আপনার জন্য পূর্বোল্লিখিত নিয়ম প্রযোজ্য হবে না, বরং নতুনভাবে নামাজ পড়তে হবে।
নামাজ পড়ার সময় রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা : ২/২৮)
নামাজের পরে সন্দেহ হলে যা করবেন
ক্ষেত্রবিশেষে যদি নামাজ শেষ করার পর সন্দেহ হয়, নামাজ এক রাকাত কম হয়ে গেল কিনা? তাহলে এই সন্দেহের কোনো মূল্য নেই। বরং নামাজ পূর্ণ হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে।
আর যদি সঠিকভাবে স্মরণে আসে যে এক রাকাত কম হয়েছে, তাহলে দাঁড়িয়ে আরও এক রাকাত নামাজ পড়ে নিবেন এবং সিজদায়ে সাহু সহকারে নামাজ শেষ করবেন।
কিন্তু ইতোমধ্যে যদি এমন কোনো কাজ করে থাকেন যাতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়, (যেমন কেবলা থেকে ঘুরে বসে থাকা বা কথা বলে থাকা) তাহলে নতুন নিয়ত বেঁধে সম্পূর্ণ নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। আর প্রথম অবস্থায়ও (কেবলার দিক থেকে ঘুরে যাওয়া) নতুনভাবে নামাজ পুনরায় পড়ে নেওয়া উত্তম; জরুরি নয়।
নামাজের সালাম ফেরানোর পর স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করার পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে উক্ত নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। এই নামাজ আবার পড়তে হবে। (ইবনে আবি শায়বা : ২/২৮)
কারো যদি নামাজের পর দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, কিছু রাকাত পড়া হয়নি আর এমন অবস্থায় সে যদি সালাম ফিরিয়ে ফেলে, তাহলে সে নামাজপরিপন্থি কোনো কাজ না করে থাকলে— ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে দেবে। যদি নামাজপরিপন্থি কোনো কাজ করে ফেলে, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা : ২/২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে যেদিকে তার মন বেশি সায় দেবে, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রত্যেক রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত— সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে বসবে, এরপর চতুর্থ রাকাত পড়বে। শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৭৭)
তথ্যসূত্র : আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড: ২/৯৩-৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৩০; কিতাবুল আছল : ১/১৯৮; বাদায়েউস সানায়ে : ১/৪০৪; আল-বাহরুর রায়েক : ২/১১১