পৃথিবীর ছাড়া আর কোনো গ্রহে এখন পর্যন্ত প্রাণের অস্তিস্ব পাওয়া যায়নি। পৃথিবীই এমন এক গ্রহ যেখানে অত্যাধিক গরম ও প্রচন্ড শীত দুইই অনুভব করা যায়। তবে আমরা অনেকেই জানি, শীতল পরিবেশে বাস করা কোনো প্রাণীকে যদি উষ্ণ পরিবেশে রাখা হয় তবে সেই প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টের। তবে পৃথিবীতে এমন এক প্রাণী রয়েছে যে একই সঙ্গে অত্যাধিক গরম সহ্য করার পাশাপাশি অস্বাভাবিক ঠাণ্ডাও সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারে।
বিশেষ এই প্রাণীটির নাম হচ্ছে টারডিগ্রেড। ১৭৭৩ সালের অগাস্ট মাসে এই প্রাণীটির খোঁজ সর্বপ্রথম পান জার্মান প্রাণীবিজ্ঞানী জোহান। প্রাণীটির সহ্য ক্ষমতা সত্যিই অবাক করবে আপনাকে। এর আকার মাত্র শূণ্য দশমিক ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১ মি.লি. মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই প্রাণীর রয়েছে ছোট ছোট আটটি পা এবং নিজস্ব এক পাচনতন্ত্র। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটির পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান অয়মিয়াকনে বাস করতেও সমস্যা হয় না। শীতকালে অয়মিয়াকনের তাপমাত্রা নেমে যায় প্রায় -৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি। সেখানে তারা কোনো বাধা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে।
সমুদ্রের সবচেয়ে গভীর স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও এরা বেঁচে থাকতে পারে
আসলে এই তাপমাত্রা এই প্রাণীর কাছে তুচ্ছ। আবার সাধারণত পানি ফুটতে থাকে ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তবে টারডিগ্রেড ১৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও বেঁচে থাকতে পারে। সমুদ্রের সবচেয়ে গভীর স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে পানির চাপ থাকে অনেক বেশি। এমনকি সেখানের পরিবেশেও সে টিকে থাকতে পারে।
তবে এই প্রাণীর আরো বিশেষ একটি চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হলো যে, এটি প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া ছাড়াই বাঁচতে পারে। খাবার না খেয়ে এতো লম্বা সময় বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানী পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে “ক্রিপ্টোবায়োসিস”। এই প্রক্রিয়ায় এই প্রাণীটি নিজের শরীরের সব মেটাবলিজম প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় ও এর ফলে পানির পরিমাণ একদম কমে গিয়ে তার নিজের শরীর সম্পূর্ণ শুষ্ক হয়ে যায়।
এই অবস্থায় এই প্রাণীটির শরীরে মাত্র ৩ শতাংশ পানি থাকে। এই প্রক্রিয়ার সময় এই প্রাণীর কোনো শক্তি বা খাদ্যের প্রয়োজন হয় না এবং এই পরিস্থিতিতে সে লম্বা হাইবারনেশনে চলে যেতে পারে। পরিস্থিতি সুবিধার হলে প্রাণীটি আবার নিজের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে শুরু করে এবং খাবারের খোঁজে বেরিয়ে আসে। উদ্ভিদ কোষের ফ্লুইড, ব্যাকটেরিয়া এবং এর থেকে ছোট আকারের প্রাণীই মূলত এর খাবার।