জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতবর্ষে বদলে যাচ্ছে বর্ষাকলের প্রকৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হবে। একইসঙ্গে তাপমাত্রাও থাকবে বেশি। অতিবৃষ্টি নিয়ে আসতে পারে বন্যা। এসব তথ্য আগামী বর্ষাগুলোতে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আভাস দিচ্ছে।
নতুন এক গবেষণা বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের এ ধারণাকে আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশবিজ্ঞানীরাও বলছেন, এদেশেও বর্ষাকাল বদলে যাচ্ছে। আগে বর্ষাকাল একটা সাইকেল বা চক্র মেনে চলত। এখন সেটা দেখা যাচ্ছে না।
জলবায়ুর পরিবর্তন যে বর্ষাকালকে বদলে দিচ্ছে, বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই তা বুঝতে পারছিলেন। কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে করা আগের গবেষণাগুলো থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়ায় তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে গরম আবহাওয়ায় বাড়তি আর্দ্রতা গ্রীষ্ফ্ম ও বর্ষাকে করে তুলেছে আরও বেশি বৃষ্টিপ্রবণ। এতে মাঝেমধ্যে হচ্ছে অতিবর্ষণ, কোনো পূর্বাভাস সেখানে টিকছে না।
শুক্রবার সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদন বিজ্ঞানীদের ওই ধারণার পক্ষেই নতুন প্রমাণ হাজির করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। গত ১০ লাখ বছরে জলবায়ু কীভাবে বদলেছে, সেই তথ্য বিশ্নেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় ধারণা দিতে চেয়েছেন যে, কেমন হতে পারে আগামী দিনের বর্ষাকাল।
নতুন এই গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বর্ষার এই মেজাজ বদলে পুরো অঞ্চলের চেহারা আর ইতিহাসই বদলে যেতে পারে। এ গবেষণার জন্য ১০ লাখ বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য বিজ্ঞানীরা কীভাবে পেলেন? না, টাইম মেশিন তাদের নেই। তারা কাজ করেছেন কাদা নিয়ে। প্রতি বর্ষায় পুরো ভারতবর্ষ ধুয়ে বিপুল পলি নিয়ে বৃষ্টির পানি পৌঁছায় বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরে। সাগরের ভূস্তর খনন করে বিজ্ঞানীরা সেই নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
এ কাজে পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাটির নমুনা নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতি বর্ষায় জমা নতুন স্তরগুলো থেকে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যে বছর বৃষ্টি বেশি হয়, সাগরে স্বাদু পানির জোগান বাড়ে, উপরিভাগের লবণাক্ততা কমে আসে। তাতে সাগরের উপরিতলে থাকা অনেক ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবের মৃত্যু হয়। সেসব দেহাবশেষ জমা হয় মাটির স্তরের সঙ্গে। এভাবে প্রতিবছর পরতের পর পরত জমে সাগরতলের ভূস্তরে গ্রন্থিত হয় ইতিহাস।
এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আর্থ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক স্টিভেন ক্লেমেন্স।
তিনি বলেন, গত ১০ লাখ বছরের তথ্য বিশ্নেষণ করে আমরা দেখেছি, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায়। ফলে জলবায়ু মডেলগুলোর যে পূর্বাভাস আমরা এতদিন পেয়ে আসছি, তার সঙ্গে লাখো বছরের প্রবণতা দারুণভাবে মিলে যাচ্ছে।