নাঈমুল ইসলাম খান: ভারত বর্তমানে করোনা সংক্রমণের মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করছে, এই কথা সত্য, এজন্য আমরা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। কিন্তু করোনা ইমারজেন্সি মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের তাৎক্ষনিক ও সরাসরি কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। অর্থাৎ ভ্যাকসিন দিয়ে এই মুহূর্তে ভারতের করোনা সংকট দূরীভূত হবে না। কারণ ভ্যাকসিনের প্রভাব তাৎক্ষনিক নয়, সুদূরপ্রসারি। কারণ ভ্যাকসিন প্রতিষেধক নয়, প্রতিরোধক।
ভারত আমাদের কেনা টিকা সরবরাহ যতো দেরি করবে, ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিরক্তি ও বিদ্বেষ ততোটাই বাড়বে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সময়কালে ভারত বাংলাদেশ হৃদ্যতা ও ঘনিষ্ঠতা যতোটুকু বেড়েছে সেটা স্বল্প সময়ে দুঃখজনকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই টিকা ভারতে উৎপাদিত, কিন্তু উদ্ভাবিত নয়। এটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত এবং ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারি (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। অগ্রিম মূল্য পরিশোধিত, চুক্তিবদ্ধ।
এখানে উল্লেখ্য, এই টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়াও আরও ৬টি দেশে ‘আন্ডার লাইসেন্স ফ্রম অ্যাস্ট্রাজেনেকা’ উৎপাদিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যখন ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সবচেয়ে নৈকট্যে, তখন ভারতের এই অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাক্সিক্ষত নিষেধাজ্ঞায় ভ্যাকসিন বাংলাদেশে না আসলে দুদেশের সম্পর্ক সমাধানের জন্য কঠিন সংকটে নিপতিত।
আমরা যতোদূর জানি, সেরাম ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশের জন্য তৈরি একটি চালান পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। আমাদের অনুরোধ আর দেরি না করে ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করুন। সেরাম একটি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের টাকা নিয়েছে এবং চুক্তিবদ্ধ। এভাবে বেসরকারি চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করলে আঞ্চলিক নেতা হওয়ার যোগ্যতায় ভারতের অনেক ঘাটতি দেখা দেবে।
আমরা ভ্যাকসিন উপহার চাই না, নিজেদের কেনা ভ্যাকসিন সময়মতো আমাদের পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা চাই।
আমরা যারা দশকের পর দশক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে অনেক মেধা, শ্রম, ঘাম, বিনিয়োগ করেছি, কিছুতেই চাই না দুই প্রতিবেশির সম্পর্ক আবার সংকটের গভীর খাদে নিপতিত হোক।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়