করোনাভাইরাস মহামারি নতুন আকার ধারণ করায় যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং রমজানে তারাবির নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। চলমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গত সোমবার (১২ এপ্রিল) এ নির্দেশনা জারি করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এদিকে গতকাল (১৩ এপ্রিল) মঙ্গলবার মুসলিম ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম তারাবি নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ এশা সারাদেশের সব মসজিদগুলোতে এ তারাবির নামাজ আদায় শুরু হয়। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এক মসজিদে ২০ জনের বেশি মুসল্লির অনুমতি না থাকায় বাকি মসল্লিরা পড়েছেন বিপাকে। প্রত্যেক মসজিদে ২০ জন প্রবেশের পর গেট তালাবদ্ধ করে দিতে দেখা গেছে। গতকাল রাত থেকে এ সংক্রান্ত বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মসজিদে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করতে এসে গেট তালাবদ্ধ দেখে জায়নামাজ নিয়ে বাইরে দাড়িয়ে গেছেন কয়েকজন মুসল্লি। এ সংক্রান্ত একটি ছবি যুক্ত করে জাহেদ ইমাম শুভ নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, ২০ জন ডুকে যাওয়ার পর গেট বন্ধ।রহমানের ঘরে রহমানের বান্দারা ডুকতে পারছে না!
শুভ লিখেন, মসজিদে ডুকতে না পারার কষ্ট এসব মসজিদমুখী মানুষদের মনে কি রকম আঘাত করতেছে এটা আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু মন কি আর চায় তারাবি বাসায় পড়তে? তাই পেপার আর জায়নামাজ বিছিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গনেই সালাত আদায় শুরু করেছেন। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন অন্তত সিদ্ধান্ত বিবেচনা করেন।
এদিকে, মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মসজিদে তারাবি প্রতি ওয়াক্ত নামাজ খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ সর্বোচ্চ ২০ জন অংশ নিতে পারবে। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিগণ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে, মসজিদে জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করতে না পারা মুসল্লিদের বেশ কয়েকটি ছবি শেয়র করে হতাশা দেখিয়েছেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান ইমরানও।
তিনি লিখেছেন, ৯২% মুসলমান দেশের চিত্র এটি। ছবিগুলি দেখে হৃদয়টা ভেঙ্গে গেছে বলার কিছু নেই। জাস্ট এই আয়াতটা পড়ুন আর অপেক্ষা করুন, ‘আর তার চেয়ে অধিক যালেম কে? যে আল্লাহর মাসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরাণ করতে চেষ্টা করে? তাদের তো উচিৎ ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব।’
নিজের মসজিদের চিত্র তুলে ধরে চাটখিল পাঁচগাঁও মাহবুব সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন লিখেছেন, ‘মুসল্লিরা মসজিদের বাইরে তারাবির নামাজ পড়েছে। মোদিকে নিয়ে স্বাধীনতা উদযাপন, বইমেলা, বাংলাদেশ গেমস, হিন্দুদের স্নান উৎসব, গার্মেন্টস, ব্যাংক কোথায়ও কোন সমস্যা নাই, সমস্যা শুধু শুধু মসজিদে! এ ধরণের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এম এম আলী নামে সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষার্থী এ সংক্রান্ত কিছু ছবি শেয়ার করে অনেকটা পরাশর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘৪ তলা মসজিদ। প্রতি তলার ধারণক্ষমতা যদি ৩০০+ জন, তাহলে ৪*৩০০=১২০০ লোকের জায়গায় ১২০ জন কি দশ হাত ফাঁকা করে দাঁড়িয়েও নামাজ পড়তে দেয়া যেতো না?’
ওবায়দুর রহমান শিবলী নামে ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, হৃদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে… তবে আলহামদুলিল্লাহ্ গ্রামের মসজিদগুলো এর ব্যতিক্রম। তিনি লিখেন, করোনার বিধিনিষেধ থাকায় পবিত্র রমজানের নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের ভোগান্তি।