Site icon The Daily Moon | Popular Bangla News | National | International | Education | Entertainment | Religion | Employment

রমজান পেয়েও যিনি গুনাহমুক্ত হতে পারেন নি তার ধ্বংস অবধারিত

প্রতীকী ছবি

আরিফ আজাদ: ধরুন— আপনি রাস্তায় হাঁটছেন এবং আপনার চারপাশে অসংখ্য ডায়মণ্ডের ছড়াছড়ি। আকাশ পানে তাকিয়ে দেখছেন যে, ঝুম বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে মহামূল্যবান মণি-মুক্তো!
কিন্তু, এই ডায়মণ্ড একটিবারের জন্য আপনি ধরেও দেখলেন না। চারপাশে সবাই কুড়িয়ে নিচ্ছে সেগুলো দু’হাত ভরে৷ কিন্তু আপনি বিরক্ত হয়ে ঘরে এসে দরোজা লাগিয়ে দিয়ে বসে রইলেন।

পরেরদিন যখন আপনি মানুষের কাছে বলতে যাবেন, ‘জানো, কাল না আকাশ থেকে ডায়মণ্ড-বৃষ্টি হয়েছে। ওমা, সে কী এক ব্যাপার! পথের যেদিকে তাকাচ্ছি কেবল ডায়মণ্ড আর ডায়মণ্ড! মানুষগুলো হুড়োহুড়ি করে কুঁড়িয়ে নিচ্ছিলো সব। কিন্তু ডায়মণ্ডও বাপু ফুরোবার নয়। যে যেভাবে পারছে ঘরে তুলছে। আমার এতো বিরক্তি লাগলো, জানো? আমি সোজা ঘরে এসে দরোজা লাগিয়ে বসে রইলাম’।

আপনার মুখে এই গল্প শোনার পর আপনার গল্প-শ্রোতা আপনাকে সর্বপ্রথম যে কথাটা বলবে তা হচ্ছে— ‘তুমি তো আস্ত বেকুব দেখছি! আকাশ থেকে ডায়মণ্ড ঝরে পড়ছে, আর তা কুড়িয়ে না নিয়ে তুমি ঘরের কপাট লাগিয়ে বসে রইলে?’

রামাদান নিয়ে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুব ভয়ানক একটা হাদিস আছে। একবার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘আ-মীন’। তিনি সেদিন মোট তিনবার আ-মীন বলেছিলেন। কিন্তু সাহাবারা বুঝতে পারলেন না নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রেক্ষিতে আ-মীন বললেন। তারা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনাকে তিনবার আ-মীন বলতে শুনলাম। আপনি কি বলবেন কেনো আপনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে তিনবার আ-মীন বলেছেন?’

তিনবার আ-মীন বলার নেপথ্য কারণ সেদিন নবিজী সাহাবাদের জানিয়েছিলেন। সেই তিন কারণের একটা কারণ ছিলো এমন যে— নবিজী বললেন, ‘জিবরাঈল এসে বললো, যে ব্যক্তি রামাদান পেলো কিন্তু নিজের গুনাহসমূহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক’। জিবরাঈল আলাইহিস সালামের এমন ভীতিপ্রদ দুয়াতে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন— আ-মীন।
দুয়াটা অবিশ্বাস্যরকম ভয়ানক এইজন্যে যে— এই দুয়াটা করেছেন ফেরেশতাকূলের সরদার জিবরাঈল, এবং তাতে ‘আ-মীন’ বলেছেন নবি-কূলের সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এই দুয়া যে অতি-অবশ্যই কবুল হওয়ার— তা নিঃসন্দেহ।

রামাদান পেলো, কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে নিজের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না, এমন ব্যক্তিকে এতো অভাগা হিশেবে এই হাদিসে উল্লেখের কারণ কী?
কারণ হলো— রামাদান এমন একটা মাস যে মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা জান্নাতের দরোজাগুলো খুলে দেন আর বন্ধ করে দেন জাহান্নামের দ্বার। এই মাসে প্রতিটা ভালো কাজ, ভালো আমল, ভালো নিয়্যাতের সওয়াব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেন বান্দার জন্যে। এতোকিছুর পরেও, এই মাসে এমন একটা রাত তিনি বরাদ্দ রেখেছেন, যে রাতটা হাজার মাসের চাইতে উত্তম! এই সুযোগ বছরে কেবল একবার-ই আসে।

রামাদান মাস আকাশ থেকে ডায়মণ্ড-বৃষ্টির দৃশ্যটার মতোই। এই মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাঁর রহমত দ্বারা পুরো পৃথিবীকে ঢেকে দেন। এমন একটা মাসে, এতো এতো সুযোগ সামনে পেয়েও যে লোক তা খেলাচ্ছলে হারায় কিংবা পাত্তা দেয় না, অথবা গল্পের লোকটার মতো ঘরের দরোজা লাগিয়ে বসে থাকে, সে দূর্ভাগা নয়তো কী?

আরো পড়ুন: রমজানের কিছু বিশেষ আমল

Exit mobile version