বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ বলছে রোজার মাসে স্বাভাবিক সময়ের মতোই দিনের বেলা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, তবে বিতর্ক এড়াতে এ নিয়ে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে রোববার বৈঠক ডেকেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বিশেষ করে যারা রোজা পালন করবেন তাদের জন্য আলাদা সময়ের প্রয়োজন আছে কি-না, তা নিয়ে মূলত তারা আলোচনা করবেন।
তাদের মতামতের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন সরকারের ভ্যাকসিন কমিটির সদস্য ডা. সামছুল হক। বাংলাদেশে গত সাতাশে জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধনের পর সাতই ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে এ কার্যক্রম শুরু হয়। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকার তারিখ পড়বে রোজার মাসেই।
এছাড়া নতুন নিবন্ধনকারীদের অনেকের তারিখও রোজার মাসে পড়বে। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রমজান মাস শুরু হওয়ার কথা।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই রোজা পালন করেন অর্থাৎ তারা দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকেন। ফলে এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে রোজা রেখে ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা হতে পারে কিনা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলছেন, আপাতত সিদ্ধান্ত হলো ভ্যাকসিন কার্যক্রম এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে, কারণ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামি পণ্ডিতরা জানিয়েছেন যে রোজা করেও ভ্যাকসিন নিতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বাধা নেই।
তিনি বলেন, তারপরেও আলেমদের সাথে ইসলামিক ফাউন্ডেশন রোববার বসবে এবং সেখানে আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। আমরা আশা করি ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম এভাবেই চলবে কারণ রোজা করে ইনসুলিন নিয়ে থাকেন অনেকে। সেক্ষেত্রে করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেনও বলছেন যে টিকাদান কার্যক্রমে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীর পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার বলছেন রোববারের আলেম ওলামাদের সাথে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের বৈঠকের পর এ নিয়ে বিভ্রান্তি কেটে যাবে। তবে ফাউন্ডেশনে সরাসরি কাজ করেন এমন কয়েকজন আলেম বলেছেন করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা নেই।
“আলেম হিসেবে বলতে পারি কোনো মাসালা মতেই এটি নাজায়েজ হবে না। তবে যেহেতু রোববার বৈঠক ডাকা হয়েছে ওই দিনই ফাউন্ডেশন এটি সবাইকে জানিয়ে দেবে,” বলছিলেন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী ১০ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ২৮৯ জন ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেছেন আর ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৩ জন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে এক ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে গত সাতাশে জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছিলো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুনু কস্তার সঙ্গে আরও চারজন টিকা নিয়েছিলেন, যারা হলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।
প্রথম দিনে এই পাঁচজনের বাইরে আরও ২১ জনকে টিকা দেওয়া হয় – যাদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন। তবে শুরুতে মানুষের মনে টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা সন্দেহ থাকলেও গত ৭ই ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচি শুরুর দিন দেশের কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিক টিকা দিতে শুরু করার পর টিকা দিতে আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।