আমরা রমজান মাস পার করছি। রহমত এর দশক দিন পেরিয়ে আমরা মাগফিরাতের দশকের দ্বিতীয় রোজা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তিনি আমাদেরকে সুস্থতার সঙ্গে রমজানের রোজাগুলোর রাখার সৌভাগ্য দান করছেন।
দ্রুতই রমজানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে, তাই পুণ্যকর্মের কোন দিক বাদ দেয়া চলবে না। সব ধরণের পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত ইসলামি রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহ প্রেমিকে পরিণত করে।
আসলে মাহে রমজানের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত বড়ই কল্যাণ ও বরকতমণ্ডিত। এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। এই পবিত্র মাস ইবাদত বন্দেগী ও দান খয়রাত, কোরআন পাঠসহ সব কিছুর মাঝে জোশ সৃষ্টি হয়।
মুমিন-মুত্তাকি বান্দারা এই মাসে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি দান খয়রাত করে থাকেন এবং গরীব অসহায়দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এই কামনা, তিনি যেন আমাদের এই দান খয়রাত, ইবাদত বন্দেগী, সিয়াম সাধনাকে কবুল করে আমাদেরকে মাগফিরাত দান করেন।
মাগফিরাতের দশক শেষ করে আমরা প্রবেশ করব নাজাতের দশকে। নাজাতের দশকে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি আমরা যদি বেশি বেশি নফল ইবাদতে রত হই আর গভীর মনোনিবেশ সহকারে পবিত্র কোরআন পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য যাচনা করি তাহলে ইনশাআল্লাহ তিনি আমাদেরকে শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের স্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য দান করবেন।
রমজান এবং পবিত্র কোরআন কারিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- ‘রমজান সেই মাস যাতে নাযেল করা হয়েছে কোরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ রুগ্ন এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ তোমারে জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না, এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াতে দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)।
পবিত্র রমজান মাসেই মহানবী (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত বাণী মহানবীর (সা.) কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন।
এ ব্যবস্থা মহানবীর (সা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এছাড়া ‘মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কোরআনকে মহানবীর (সা.) কাছে দু’বার পাঠ করে শুনান’ (বোখারি)।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রমজান ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে,
‘খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’ (বায়হাকি)।’
এছাড়া রোজা রেখে কোরআন করিম পাঠ করা, এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করা এবং এর অনুশাসনাদি পালন করার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দর্শনশক্তি সতেজ হয়। সে শয়তানি চিন্তাভাবনা ও প্রভাব হতে নিরাপদ থাকে।
অধিকন্তু মানুষ এক অনাবিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং পরম সম্পদ লাভ করে, যা শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়, এটি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করে তার মাগফিরাত দান করুন, আমিন।