Site icon The Daily Moon | Popular Bangla News | National | International | Education | Entertainment | Religion | Employment

সাহরি মেন্যুতে রাখুন খেজুর, জেনে নিন প্রয়োজনীয় আরও ৮ তথ্য

শায়খ আহমাদুল্লাহ

শায়খ আহমাদুল্লাহ

রমজান তথা রোজা ইসলামের একটি বিশেষ স্তম্ভ। প্রতি বছর বিশ্ব মুসলিম এ মাসকে ইবাদত, বন্দিগীর মাস হিসেবে উদযাপন করে থাকে। আর রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সাহরি। সাহরি রোজার অংশ হওয়ায় এর রয়েছে কিছু বিধি-বিধান।

আজ আমরা সাহরি সম্পর্কে সাধারণ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিজ্ঞাসার জবাব জানার চেষ্টা করবো। উত্তর করেছেন বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, আল সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা শায়খ আহমাদুল্লাহ।

প্রশ্ন: সাহরি শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: আরবিতে ‘আস সাহারু’ শব্দের অর্থ হলো ভোর রাত। রাতের শেষ প্রহরকে ‘সাহার’ বলা হয়। আর সে শেষ প্রহরে যে খাবার খাওয়া হয়, সেটাকে বলা হয় ‘সাহুর’। সুতারং সাহার বা সাহুর অর্থ হলো ভোর রাতে খাবার গ্রহণ করা।

প্রশ্ন: সেহেরি না সাহরি হবে?
উত্তর: সাহুর অথরা সাহরি হবে কিন্তু সেহেরি হবে না। এটি একটি ভুল শব্দ। ‘সেহেরি’ অর্থ হলো ‘জাদু’। সুতারং আমরা শেষ রাতের খাবারকে কোন অবস্থাতেই সেহেরি বলবো না।

প্রশ্ন: সাহারির বিধান কি? এটা কি রোজাদারের জন্য ফরয-ওয়াজিব, বাধ্যতামূলক?
উত্তর: রাতের শেষ প্রহরে খাবার গ্রহণ করা এটা সুন্নাত। কেউ যদি রোজা পালন করার উদ্দেশ্যে রাতের শেষ প্রহরে খাবার গ্রহণ করেন তাহলে তিনি একটি সুন্নাত আদায় করার সাওয়াব পাবেন। আর যদি সাধারণ সময় তিনি রাতে খাবার খান, সিয়ামের কোনো উদ্দেশ্য নেই সেটা জায়েজ। কিন্তু তিনি কোন সাওয়াব পাবেন না: কারণ সেটি সুন্নাত নয়। এটি বাধ্যতামূলক নয়।

প্রশ্ন: সাহরির ফজিলত কি?
উত্তর: রাসূর (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কারণ এর মধ্যে বরকত রয়েছে।’ রাতের শেষের খাবার যদি রোজার উদ্দেশ্য খাওয়া হয় তাহলে সে খাবারের ভেতর আল্লাহ বারাকাহ বা কল্যাণ দান করে থাকেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর।

প্রশ্ন: সাহরি ছাড়া রোজা হবে কিনা?
উত্তর: আমাদের অনেকেই প্রশ্নটা করে থাকে কোন কারণে সাহরি খেতে পারলাম না, ঘুম থেকে উঠতে পারলাম না, তাহলে আমার রোজা হবে কিনা? উত্তর হল অবশ্যই হবে। বরং রমজান মাসে ফরজ রোজা সাহরি খেতে না পারলেও রাখতে হবে। কারণ সাহরির খাবার গ্রহণ করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। এটি সুন্নাত। সুন্নত ছুটে গেলে কোন ইবাদতই নষ্ট হয়ে যায় না। সাহরি না খেতে পারলেও রোজা হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: সাহরির মেন্যু কি হওয়া উচিত?
উত্তর: যেকোনো হালাল খাবার আমরা গ্রহণ করতে পারি। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারগুলো অবশ্যই খেয়াল করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা নিজেদেরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিও না। এমন খাবার গ্রহণ করবো না যা আমাদের স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে।

তবে একটি বিশেষ খাবার গ্রহণ করার জন্য হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে খেজুর। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সাহরির মেন্যুতে খেজুর গ্রহণ কতইনা উত্তম’। অতএব আমাদের খাবারের মেন্যুতে খেজুর থাকা উচিত। এতে দুটি সুন্নাত এক সাথে আদায় হয়ে যাবে। একটি সাহরি খাওয়া অন্যটি হলো খেজুর খাওয়ার সাওয়াব।

প্রশ্ন: সাহরির সময় কখন?
উত্তর: রাতের শেষ প্রহরে আমরা খাবার গ্রহণ করব। গ্রাম দেশে অনেকেই মাঝরাতে খাবার গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তাদের রোজা তো হয়েই যাবে এবং সাহরি খাওয়ার সাওয়াবও তারা পেয়ে যাবেন; কিন্তু সুন্নাহ সম্মত উপায়ে তিনি তা গ্রহণ করলেন না।

রাতের শেষ প্রহরে গিয়ে সাহরির খাবারটা খাওয়া হলো সুন্নাহ। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আমরা খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণ করতে পারব অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত যখন শুরু হয় তার আগ পর্যন্ত আমরা সাহরি খেতে পারব। যদিও একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঢেকিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) ‘সাহরি খাওয়া শেষ করতেন, এরপরে আযান এবং তার মধ্যবর্তী সময়ে ৫০টি আয়াত তেলাওয়াত করার মত সময় থাকতো।’ তাহলে আমরা ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার ৫/৭ মিনিট আগে সাহরির খাবার শেষ করবো সেটা হল সুন্নাহ।

প্রশ্ন: সাহরির কোন দোয়া আছে কিনা?
উত্তর: সাহরি খাবারে কোন দোয়া নেই। সাহরির আগে অথবা শেষে কোন বিশেষ দোয়ার নির্দেশনা আমরা কুরআন হাদিসের কোথাও পাই না। ইফতারের সময় যেমন দোয়া রয়েছে কিন্তু সাহরির সময় কোন দোয়া পড়তে হবে না। বরং আমরা রাতের বেলায় খাবার গ্রহণ করার জন্য উঠেছি, খাবার গ্রহণ করছি এটাই প্রমাণ করছে আমি রোজার উদ্দেশ্যে খাবার গ্রহণ করছি। মুখে আলাদা করে ‘নাওয়াইতু’ বলার কোন প্রয়োজন নাই।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে প্রত্যেকটি নেক আমলকে সুন্নাহ সম্মত উপায়ে সঠিকভাবে, শুদ্ধভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুক।

Exit mobile version