সিলেটে এক দিনে দফা দফায় মৃদু ভূকম্পন ভাবিয়ে তুলেছে ভূতত্ত্ববিদদের। তাদের মতে, এই মৃদু ভূকম্পন ভবিষ্যতে বড় ধরনের কম্পনেরই আভাস দিচ্ছে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ভূকম্পের উৎসের একদম নিকটে। তাই এখন থেকেই ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ ভূতত্ত্ববিদদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সিলেট নয় সারা দেশে ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পূর্ব থেকে ভূমিকম্প হওয়ার কোনো আগাম বার্তা না পাওয়ার কারণে এটি কখন হবে বলা সম্ভব নয়। এ কারণে আগাম ব্যবস্থা নেওয়াও যায় না। তবে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে বছরে এলাকাভেদে ভূমিকম্প মহড়া পরিচালনার পরামর্শ তাদের।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৯ মিনিটে ও ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে দুই দফা ভূকম্পনে কেঁপে ওঠে সিলেট। এতে নগরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেককে সড়কে অবস্থান করতে দেখা যায়।
এর আগে, সিলেটে গত ৩০ মে ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে ও শনিবার সকাল এবং দুপুরে পাঁচ দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়। সব কটির উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট অঞ্চলে।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে ছোট ছোট ভূমিকম্প নির্দেশ করছে যে, এখানে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। ভূমিকম্প কখন হবে, সেটা ধারণা করা সম্ভব নয়।’
ভূকম্পন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আর্থ অবজারভেটরি সেন্টার বলছে, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি বাংলাদেশের অবস্থান। এ কারণে দেশের দুই দিকেই ভূগর্ভে জোরালো ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। আর বহু বছর ধরে জমে থাকা এ শক্তিতে ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের শঙ্কাও রয়েছে।
সংস্থাটির দাবি, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেটের জৈন্তা এলাকার ডাউকি ফল্ট পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। যেটি দেশের অভ্যন্তরেই পলিমাটি দিয়ে ঢাকা। এমন অবস্থায় সরকারকে জরুরি প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে মনিপুর রাজ্য। কেন্দ্রে এর মাত্রা ছিল ৬.৭। ওই কেন্দ্রে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা ছিল। আর সেটা যদি হতো, তাহলে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তো।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ১২টি ভূমিকম্প ফাটল আছে। এ সব জায়গায় ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। ঢাকার অদূরে মধুপুর ফাটল খুব বিপজ্জনক। প্রতি ১০০ বছর পর পর এ ফাটলে বড় আকারের ভূমিকম্প হয়। ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হয়েছে। তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে আছি আমরা।’