বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ ও ইউনেসকো। আজ সোমবার (১২ জুলাই) ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। -খবর ইউএনবির
হেনরিয়েটা ফোর ও অড্রে অ্যাজুল বলেন, ‘আজ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ১৫ কোটি ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। বন্ধের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সবার শেষে এবং পুনরায় খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে থাকা উচিত। স্কুলগুলো পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। স্কুল খোলার জন্য করোনা শূন্যের কোঠায় যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যায় না।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সংক্রমণ সীমিত পর্যায়ে রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সরকারগুলো অনেক সময়ই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, এমনকি মহামারিজনিত পরিস্থিতি যখন এটা দাবি করে না, তখনো বন্ধ। প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যবস্থাগুলো শেষ পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়ার বদলে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হলেও বার ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল।
যৌথ বিবৃতিতে হেনরিয়েটা ফোর ও অড্রে অ্যাজুল বলেন, স্কুলে যেতে না পারার কারণে শিশু এবং তরুণ জনগোষ্ঠী যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেওয়া যাবে না। শেখার ক্ষতি, মানসিক সংকট, সহিংসতা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া থেকে শুরু করে স্কুলভিত্তিক খাবার ও টিকা না পাওয়া বা সামাজিক দক্ষতার বিকাশ কমে যাওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাদের শিক্ষাগত অর্জন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততায় এর প্রভাব দেখা যাবে।
‘‘মা-বাবা এবং শিশু যত্নকারীদেরও ক্ষতির ভার বইতে হচ্ছে। শিশুদের ঘরে থাকা বিশ্বজুড়ে বাবা-মায়েদের বাধ্য করছে তাঁদের চাকরি ছেড়ে দিতে, বিশেষ করে এমন দেশগুলোতে যেখানে পারিবারিক ছুটির নীতিমালা নেই বা সীমিত। এ কারণেই ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করা যায় না। স্কুল খোলার জন্য করোনা শূন্যের কোঠায় যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যায় না।’’
বিবৃতিতে বলা হয়, এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে সংক্রমণের প্রধান চালিকা শক্তিগুলোর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো নেই। এদিকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশমন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব। স্কুল খুলে দেওয়া বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবং কমিউনিটির মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেওয়া উচিত।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছেন, স্কুলগুলো পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। বৈশ্বিক পর্যায়ে টিকা ঘাটতি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এ অবস্থায় টিকাদানের ক্ষেত্রে সম্মুখ সারির কর্মী ও মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত থাকবে। স্কুলে প্রবেশের আগে টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক না করাসহ সব স্কুলের উচিত যত দ্রুত সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা।
যৌথ বিবৃতিতে হেনরিয়েটা ফোর ও অড্রে অ্যাজুল বলেন, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) গ্লোবাল এডুকেশন নিয়ে বৈঠক হবে। এ বৈঠক সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও সরকারগুলোর প্রতি অনুরোধ জানাই, যাতে প্রজন্মগত বিপর্যয় এড়াতে নিরাপদে স্কুলগুলো খুলে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বর্তমানের অস্পষ্ট সুবিধার জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎকে স্কুল বন্ধ রাখার মাধ্যমে জিম্মি রাখা হচ্ছে। অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বিবেচক হতে হবে। আমরা নিরাপদে স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে পারি এবং আমাদের অবশ্যই এটি করা উচিত।’
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসজনিত বন্ধে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার বা শিক্ষণঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার তাগিদ দিচ্ছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের অনেকে যেসব এলাকায় সংক্রমণ নেই বা কম, সেসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ারও সুপারিশ করেছেন।