শ্বশুর বাড়ির সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে অসঙ্গতি এবং স্বামীর মাদকাসক্তির নির্মমতার বলি গৃহবধূ হাসনাহেনা ঝিলিক। তার স্বামী, শশুড়, শ্বাশুড়ি, দেবর ও জায়ের সম্পৃক্ততার সত্যতা মিলেছে।
পুলিশ বলছে, শ্বাসরোধে ঝিলিকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তার স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করেন মাদকাসক্ত স্বামী সাকিব। পরে ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর সহায়তায় হত্যার সব আলামত নষ্ট করে সে। এরপর রাজধানীর হাতিরঝিলে গাড়িতে তুলে দুর্ঘটনায় নিহতের নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করে তার মা-বাবা।
হাসনাহেনা ঝিলিককে সাকিবুল আলম ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ২ বছর আগে। ঝিলিকের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা সাকিবের পরিবারের তুলনায় কম হওয়ায় এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সাকিবের পরিবার। কিন্তু সাকিব নিজে বরাবরই ছিলেন বেকার। তাই স্বামী সাকিবের সঙ্গে প্রায়ই বাদানুবাদ হতো ঝিলিকের।
গত ২ এপ্রিল রাতে গুলশান ২ নম্বরের বাড়িতে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত স্বামী কিল-ঘুষি আর লাথির আঘাতে অজ্ঞান হয়ে মারা যান গৃহবধূ হাসনাহেনা ঝিলিক।
এ ঘটনার অনুসন্ধানের পর পুলিশ জানায়, শ্বাসরোধের পর স্বামী সাকিব ঝিলিকের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করেন। এ সময় ঝিলিকের শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম ও শাশুড়ি সাইদা আলম সাকিব-ঝিলিক দম্পতির নয় মাস বয়সী শিশুটিকে নিজেদের কক্ষে নিয়ে গেলেও সংজ্ঞাহীন ঝিলিককে রক্ষা বা তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসেননি।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঝিলিক যখন অসুস্থ ছিল তাকে কেউ হাসপাতালে নেয়নি। বরং তারা মরদেহকে রোগী হিসেবে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। তারা মূলত নাটক করেছে। কোনো আলামতও সংগ্রহ করেনি।
মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আলামত নষ্টে সহায়তা করেন সাকিবের ভাই ফাহিম আলম ও ভাইয়ের স্ত্রী টুকটুকি আক্তার। হত্যার পরদিন (৩ এপ্রিল) শনিবার ঝিলিকের মরদেহ গাড়িতে তুলে হাতিরঝিলে নিয়ে গিয়ে দুর্ঘটনার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন খোদ ঝিলিকের শশুর-শাশুড়ি।
এ ঘটনায় ঝিলিকের স্বামী, শশুর , শাশুড়ি ও দেবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনায় সম্পৃক্ত ঝিলিকের দেবরের স্ত্রী টুকটুকি আক্তার করোনা আক্রান্ত ও গর্ভবতী হওয়ার তাকে পুলিশ পাহারায় বাড়িতে রাখা হয়েছে।