জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে মিথেন গ্যাস। এটি একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। গ্যাসটি বায়ুমণ্ডলে প্রথম দুই দশকে কার্বনডাই অক্সাইডের তুলনায় ৮০ গুণ শক্তিশালী হিসেবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও এই দেশ থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে বলে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে ফ্রান্সভিত্তিক কোম্পানি কাইরোস সাস চলতি বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নিঃসরণের ১২টি হার শনাক্ত করেছে।
‘এখন পর্যন্ত আমরা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী মিথেন নিঃসরণ দেখতে পেয়েছি। তবে এই মিথেন গ্যাসের উৎস স্পষ্টভাবে নির্ণয় করতে পারিনি,’ জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট স্টিফেইন জার্মেই বলেন।
‘স্যাটেলাইটে ধরা পড়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মিথেন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ,’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়োতাম এরিয়েল বলেন।
বিজ্ঞানীরা সবেমাত্র মিথেনের সবচেয়ে বড় উৎস চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছেন। মেঘের আচ্ছাদন, বৃষ্টিপাত ও আলোর তীব্রতার ভিন্নতার কারণে মৌসুমভেদে এ পর্যবেক্ষণে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। সমুদ্র থেকে নিঃসরিত গ্যাস শনাক্ত করা স্যাটেলাইটের জন্য কঠিন হতে পারে। এসব গ্যাস আর্কটিকে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে রয়েছে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কার্যক্রম।
বাংলাদেশ বর্তমানে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি পদে রয়েছে এবং এর ৪৮টি সদস্য দেশের ১২০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘এসব সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি।’
মিথেনের সিংহভাগ সম্ভবত ধানক্ষেত থেকে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকরা যখন তাদের জমিতে সেচ দেন, জলাবদ্ধ মাটিতে ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে গ্যাস উৎপাদন করতে পারে। ‘অন্য উৎস হলো খনিজ গ্যাস, যা ওপরের স্তর ভেঙে গেলে উন্মুক্ত হয়। আমরা বিষয়টি কমিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাজ করছি,’ বলেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমিয়ে আনতে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য মিথেন বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসটি গন্ধহীন এবং বর্ণহীন, যার লিক শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন।
মিথেনের নিঃসরণ শনাক্তে আগামী বছর নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া ইডিএফের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা স্টিভেন হামবুর্গ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আকাশে মিথেনের যে ঘনত্ব আমরা দেখেছি এটা আমাদের জন্য একটি সংকেত এবং এ নিয়ে আমাদের আরও গবেষণা করা দরকার।’