রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ শিক্ষার্থী। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন খড়খড়ি এলাকায় কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রায়হান, তাসিন, ফওজিয়া, জেবা ও সুস্মিতা হাসপাতালের ৩১ ও ১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তারা প্রত্যেকেই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।
এ ঘটনায় রাতেই শিক্ষার্থীরা বাদী হয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে ওই মামলায় নগরীর খড়খড়ি এলাকা থেকে মিঠু নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চন্দ্রিমা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ব্রজগোপাল জানান, ছাত্রীরা তাদের হোস্টেলে জামাকাপড় নিতে এসেছিলেন। এটা নিয়ে সেখানে গণ্ডগোল হয়েছে বলে তিনি খবর পান। পরে দ্রুত সেখানে পুলিশ পৌঁছায়। এ ব্যাপারে রাতে শিক্ষার্থীরা থানায় অভিযোগ দেন। পরে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, শনিবার মন্ত্রণালয় থেকে কলেজ পরিদর্শনের কথা। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে তারা ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। ওই সময় কিছু ছাত্রী তাদের জামাকাপড় নিতে হোস্টেলে ঢুকেছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামানসহ কর্মচারীরা বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়ে আহত করেন। হামলাকারীরা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করেছেন। ছবি তুলতে গেলে তাদের ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, কিছু শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মচারীরা তাদের ঢুকতে বাধা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মচারীদের ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে ধারণ করা ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যায়, মারধরের সময় চিৎকার করে ছাত্রীরা ছোটাছুটি করছেন। একই ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি দিয়ে এক ব্যক্তি ছাত্রীদের বেধড়ক পেটাচ্ছেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শর্তসাপেক্ষে রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পায়। কলেজে প্রথম ব্যাচে ১৮ জন ও দ্বিতীয় ব্যাচে ২৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তৃতীয় ব্যাচে কলেজ কর্তৃপক্ষ আসন সংখ্যা বৃদ্ধির আবেদন জানায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরিদর্শন শেষে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন দেয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়।
এ ঘটনায় ২০১৬ সালে ওই বর্ষের কার্যক্রম স্থগিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ওই শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম স্থগিতই রাখা হয়। অনুমোদন ছাড়াই গত সাত বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে কলেজটি। বর্তমানে সাত ব্যাচে প্রায় ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন এই কলেজে।
বিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর অভিযোগে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২ নভেম্বর স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ৬ নভেম্বর হাতে পায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে গত ৮ নভেম্বর নগরীতে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে জানানো হয়, শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে খোলা হয়েছিল শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে। সেখানে ভর্তি হয়ে তারা প্রতারিত হয়েছেন। তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতারণার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কঠোর শাস্তিরও দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
ওইদিনই পাল্টা সমাবেশ করে মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান কলেজটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিক বিবেচনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবি জানায় কর্তৃপক্ষও।
শর্তপূরণ না করায় কলেজটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পায়নি। এতে এমবিবিএস পাস করা চার শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপ করতে না পেরে একবছর বসেছিলেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা গত ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনে নামেন। এরপর আন্দোলন চরমে পৌঁছালে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নানান কৌশলে দমনের চেষ্টা করছিল কর্তৃপক্ষ।