২০১৮ সাল থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধকৌশল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জেনারেল অস্টিন স্কট মিলার। সোমবার (১২ জুলাই) কাবুলের ন্যাটো দফতরে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেন তিনি। এরপর সোমবার বিকেলেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন।
এদিকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার জেনারেল অস্টিন স্কট মিলার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আফগানিস্তানের দায়িত্ব সামলাবেন মেরিন জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেনজি। তবে তিনি আফগানিস্তানে যাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সদর দফতর থেকেই কাজ চালাবেন তিনি।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করার পর এই প্রথম দেশটিতে মার্কিন সেনাকে কম্যান্ড দেওয়ার জন্য কোনো জেনারেল থাকছেন না। চার স্টার পদমর্যাদার অস্টিন দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন চার স্টার পদমর্যাদার জেনারেল ফ্র্যাঙ্কের হাতে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন সেনা যাতে সুষ্ঠু ভাবে আফগানিস্তান থেকে দেশের বিমান ধরতে পারেন, তা দেখাই ফ্র্যাঙ্কের প্রধান দায়িত্ব।
এছাড়া মার্কিন সেনাঘাঁটি রক্ষা করা, প্রয়োজনে তালেবানের বিরুদ্ধে এয়ারস্ট্রাইক চালানো এবং কাবুল বিমানবন্দর রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হবে নতুন জেনারেলকে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সকল মার্কিন কূটনীতিককেও নিরাপত্তা দিতে হবে তাকে। ৩১ আগস্টের মধ্যে সকলেই দেশে ফিরে যাবেন। তারপর আর আফগানিস্তান নিয়ে ফ্র্যাঙ্কের কোনো দায়িত্ব থাকবে না।
এদিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে জেনারেল অস্টিন মিলার চলে যাওয়া স্বাভাবিক ভাবেই তালেবানদের জন্য ভালো খবর। গত কয়েকমাস ধরে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করেছে তালেবান। বস্তুত, মার্কিন হিসেব অনুযায়ী, দেশের এক-তৃতীয়াংশ এখন তালেবানদের দখলে। শুধু তাই নয়, প্রায় প্রতিটি আঞ্চলিক রাজধানী ঘিরে ফেলেছে তারা। দখল করা কেবল সময়ের অপেক্ষা। কান্দাহারেও প্রায় ঢুকে পড়েছে তালেবান যোদ্ধারা।
মার্কিন কূটনীতিকদের বক্তব্য, ইরান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানের সীমান্ত এখন তালেবানের দখলে। সে কারণেই কাবুল বিমানবন্দর তালেবানমুক্ত রাখা সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিমানবন্দর দখল হয়ে গেলে কোনো মার্কিন সেনা দেশে ফিরতে পারবে না।
মার্কিন সাহায্যপুষ্ট আফগান সেনা তালেবানের সামনে কার্যত ভেঙে পড়েছে। অধিকাংশ অঞ্চলেই তারা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। বহু সরকারি সেনা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন সেনা দেশ ছাড়লেই তালেবান গোটা আফগানিস্তান দখল করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
যদিও এখনও পর্যন্ত নিজেদের শক্তিশালী অঞ্চলগুলোই তালেবান দখল করেছে। অন্য জাতি বা গোষ্ঠীার অঞ্চলে এখনও সে ভাবে তারা ঢুকতে পারেনি বলে আফগানিস্তানের কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্র দেশ ছাড়লে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনাও তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।