নুসরাত জাহান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত অভিনেত্রী। কে এই নুসরাত, কি তার পরিচয় যা জানা যাচ্ছে, বিতর্ক যেন তার পিছু ছাড়ছে না। বর্তমান তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসর বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বসিরহাট থেকে জয়ী একজন সংসদ সদস্য।
নুসরাত ১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতায় বাঙালি মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর যত্নে বড় হন তিনি। ‘আওয়ার লেডি কুইন অব দ্য মিশন্স’ স্কুলে পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা তার। ভবানীপুর কলেজ পড়াশোনা করেছেন। যদিও নুসরাতের হলফনামায় দেখা যায় তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ। অন্যদিকে লোকসভার সাইটে দেওয়া তিনি অনার্স গ্র্যাজুয়েট। এমনকি ২০১০ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে নুসরাত মডেলিং জগতে পা রাখেন।
‘শত্রু’ ছবি দিয়ে ২০১১ সালে পা রাখেন টলিউড। প্রথম ছবিতে জিতের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন। প্রথম ছবিতে নায়িকাকে দেখে পছন্দ করেন দর্শক।
২০১২ সালে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত কাদের খানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বহুদিনের। কাদেরকে বাঁচাতে সাহায্যও করেছিলেন নুসরাত, এমনও শোনা যায়। বিতর্কে জড়ায় তার নাম।
এছাড়াও জামশেদপুরের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত, ছোটবেলার বন্ধু ভিক্টর ঘোষের সঙ্গে থাকতেন নুসরাত। টলিউডের এক প্রযোজকের সঙ্গে তার নাম জড়ানোর পর তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে তার বন্ধুর সঙ্গে তিনি লিভ ইন রিলেশনশিপে রয়েছেন। তার সঙ্গেই থাকেন। শোনা গিয়েছিল তাকে ও ভিক্টরকে বিয়েও করেছিলেন তিনি।
ব্যবসায়ী নিখিল জৈনের সঙ্গে ২০১৯ সালের ১৯ জুন তুরস্কে বিয়ে করেন নুসরাত। ‘রঙ্গোলি’ শাড়ির মালিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। ধুমধাম করে বিয়ে হয় নুসরাতের। ফিরে এসে কলকাতার এক পাঁচ তারকা হোটেলে সারেন রিশেপশন। রাজনৈতিক মহল থেকে টলিউড, হাজির ছিলেন বিশিষ্টজনেরা। দাম্পত্য জীবনের মিষ্টি মুহূর্ত মাঝেমধ্যেই ফুটে উঠত সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন নুসরাত জাহান। বিজেপির সায়ন্তন বসুকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে নির্বাচনে জিতে বসিরহাটের সংসদ সদস্য হিসেবে সব মানুষের মন জিতে নেন। শপথ বাক্য পাঠ করেন এক মাথা সিঁদুর নিয়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেন সকলের মধ্যে।
যশ-নুসরাতকে গিয়ে টলিউডে আলোচনা চলছিলই। সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরকে ট্যাগ করে ছবি দেওয়া, ছবি সৌজন্যেও ভেসে ওঠে একে অপরের নাম। একসঙ্গে দুজনে ‘ডিকশনারি’ ছবির প্রিমিয়ারে হাজিরও হন যশ-রত।
দক্ষিণেশ্বরে মদন মিত্রের সঙ্গে নুসরাত ও যশের ছবি ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, রঙ্গোলির শাড়িতে সেজেছেন নুসরাত। হাতে শাখা পলা, মাথায় সিঁদুর। এর বেশ কিছু আগে থেকেই নিখিলের সঙ্গে থাকা বন্ধ করে দেন নুসরাত। শোনা যায়, এদিন যশের সঙ্গে তার বিয়েও হয়।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি প্রচারণা চালাতে হয়েছে। একবার মেজাজও হারিয়েছিলেন। জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ঢিলেঢালা জামা পরতেও দেখা গিয়েছিল অভিনেতাকে।
নুসরাত অন্তঃসত্ত্বা এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই গুঞ্জন শুরু হয়। গত বছর নভেম্বরে নুসরাত নিখিলের বাড়ি থেকে চলে আসেন। নিজের গুরুত্বপূর্ণ নথিও সঙ্গে নিয়ে এসে বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন। সেই থেকেই নিখিলের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে নুসরাতের সন্তানের বাবা কে, তা নিয়েই শুরু হয় কানাঘুষা।
চারিদিকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বিবাহিত না হলে শপথ বাক্য পাঠের সময় কীভাবে নিজেকে ‘নুসরাত জাহান রুহি জৈন’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন নুসরাত। আবার লোকসভার ওয়েবসাইটেও তার স্ট্যাটাস সিঙ্গেল নয় ম্যারিড, স্বামীর নাম নিখিল জৈন। আলোচনা-সমালোচনা চলতেই থাকে।
নুসরাত বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, তার বিয়েই হয়নি, তারা সহবাসে ছিলেন। তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে ওই বিয়ে ‘অবৈধ’। দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের বিয়ের জন্য যে আইন, তা মেনেও নিখিল-নুসরাতের বিয়ে হয়নি। তার মতে, যেহেতু বিয়েই হয়নি তাই আইনের পথে তিনি হাঁটবেন না। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে আক্রমণের মুখে পড়েন নুসরাত।
বিবৃতি পাল্টা বিবৃতিতে প্রতিদিনই নতুন কোনও তথ্য সামনে আসছে, এরই মাঝে নুসরাতের বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে এল। যদিও এখনো এই বিষয়ে কিছু বলেননি নুসরাত। পানি এখন কতদূর গড়ায় তা বলবে সময়!