ব্যাপক বিবাদপূর্ণ জম্মু ও কাশ্মিরের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তিন ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে সঠিক সময়ে জম্মু এবং কাশ্মিরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, জম্মু-কাশ্মিরের প্রথম সারির আটটি রাজনৈতিক দলের ১৪ জন নেতা দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ওই বৈঠক করেছেন। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ঠিক করতে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক চারজন মুখ্যমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।
ওই বছরের আগস্টে জম্মু এবং কাশ্মিরকে বিভক্ত করে কেন্দ্রশাসিত দুটি ভূখণ্ডের মর্যাদা দেওয়া হয়। বৈঠকে জম্মু-কাশ্মিরের নেতাদের আশ্বস্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উপযুক্ত সময়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জম্মু-কাশ্মিরের সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সহায়তা চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। জম্মু-কাশ্মিরের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
দেশটির সরকারি সূত্রগুলো বলছে, জম্মু-কাশ্মিরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করাই ছিল বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা জম্মু-কাশ্মিরের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচনের মতো সফলভাবে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ১ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করেছিলেন জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আব্দুল্লাহ এবং তার ছেলে ওমর আব্দুল্লাহ। এর তিনদিন পর ৪ আগস্ট তাদের গ্রেফতার করা হয়। কাশ্মিরের এই নেতাদের গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর সংসদে জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়; যা তাদের স্তব্ধ করে দেয়।
সংসদে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার সময় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, উপযুক্ত সময়েই জম্মু-কাশ্মিরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো হবে।
বৈঠক শেষে ওমর আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, শুধুমাত্র জম্মু-কাশ্মিরে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাবে বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রায় সব নেতাই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, অন্যান্য রাজ্যে ২০২৬ সালে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তাহলে কেন জম্মু ও কাশ্মিরের ক্ষেত্রে সেটি আগেই করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছি, সীমানা পুনর্নির্ধারণ দরকার নেই। কেন্দ্র এবং কাশ্মিরের মধ্যে যে বিশ্বাস ছিল তা ভেঙে গেছে।
বৈঠক শেষে মেহবুবা মুফতি বলেছেন, আমরা ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য লড়াই করবো। এই লড়াই মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর ধরে হতে পারে। আমরা এই বিশেষ মর্যাদা পাকিস্তানের কাছ থেকে পাইনি। আমরা ভারতের কাছ থেকে এই মর্যাদা পেয়েছি। আমরা জওহরলাল নেহরুর কাছ থেকে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা পেয়েছি। এ বিষয়ে কোনও আপোষ হতে পারে না।