যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফেক’ নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আসার পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম থেকে দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিসিয়াল একাউন্ট ব্লক করে দেয়ার পর এমনই পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ‘ফেক’ নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে তাকে শনাক্ত করা কঠিন হবে। যেহেতু তার অফিসিয়াল একাউন্টগুলো ব্লক করে দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে এটাই তার জন্য সুবিধা হবে। এটি নতুন কিছু নয়, এমনটি আরও অনেকে করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেসবুকের একজন নির্বাহী রম্বকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তার সমর্থকদের উস্কে দিয়েছেন। কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে হামলার তার প্রমাণ। আমাদের কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তিনি আমাদের গাইডলাইন ব্রেক করেছেন এজন্য তার একাউন্ট ব্লক করে দেয়া হয়েছে। তবে তিনি চাইলে ‘ফেক’ নাম ব্যবহার করে স্যোশাল মিডিয়ায় আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হবে।
ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম স্থায়ীভাবে ব্লক না করলেও আজীবনের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে টুইটার। প্রতিষ্ঠানটি এক টুইট বার্তায় বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ্যাকাউন্ট (@realDonaldTrump) থেকে দেয়া সাম্প্রতিক পোস্টগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর একাউন্টটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবারো দাঙ্গায় উসকানি দেয়ার আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ওই টুইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্লক করে দেয়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই আহ্বান জানালেন মিশেল ওবামা।
বৃহস্পতিবার টুইটারে এক পোস্টে মিশেল বলেন, সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠানগুলোর এই দানবীয় আচরণ বন্ধ করার এখনই সময়। এমনকি এই প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে এই লোকটিকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করাও যেতে পারে। একইসঙ্গে দেশের নেতাদের এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা তৈরি বন্ধে নীতিমালা আনার কথাও বলেছেন তিনি।
ফেসবুক-টুইটারের পর ইউটিউব চ্যানেলও বন্ধ হল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হিংসাত্মক হামলার জেরে নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে চ্যানেলটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইউটিউব।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ন্যাপচ্যাট। বুধবার এক বিবৃতিতে স্ন্যাপচ্যাটের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। স্ন্যাপচ্যাটের মুখপাত্র বলেন, গত সপ্তাহে এক ঘোষণায় আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্ন্যাপ অ্যাকাউন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছিলাম। এখন আমাদের স্ন্যাপচ্যাট কমিউনিটির স্বার্থে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের লিহাই বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ৩২ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাকে এই ডিগ্রি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুক্রবার লিহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি এক সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছে।
এর আগে স্থানীয় সময় গত বুধবার কংগ্রেস অধিবেশন চলাকালে বিক্ষোভ শুরু করে ট্রাম্প সমর্থকরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মারমুখী বিক্ষোভের মুখে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ওয়াশিংটনে আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবন। বিক্ষোভ ঠেকাতে ফাঁকা গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। অবরুদ্ধ করা হয়েছে ভবনটি। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
নির্বাচনের পর মূলত এ বিষয় নিয়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন করে বৈরিতা শুরু হয়। তবে এসব বিষয়ে পরোয়া করেন না তিনি। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই নিজস্ব যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সামাজিক মাধ্যমগুলো সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমি এবং আমার সমর্থকরা চুপ থাকব না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি করা উচিত এবং আমরা শিগগিরই এই ঘোষণা নিয়ে হাজির হব। এটি যদি কার্যকর না হয় তবে তিনি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুসরণ করবেন বলে জানান।